কিভাবে শিশুরা সুস্থ ও সুন্দর ভাবে বেড়ে ওঠবে ?
সুস্থ-সুন্দর ও বুদ্ধিমান শিশু সবারই কাম্য । |
How will children grow up healthy and beautiful? Bangla tips.
সুস্থ-সুন্দর ও বুদ্ধিমান শিশু সবারই কাম্য ।সবাই সমান বুদ্ধিমত্তা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে না । অনেকেই শিশুকালে অনেক বুদ্ধিমান ও ভালো স্মৃতি শক্তির অধিকারী হয়, কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে দেখা যায় তা আর থাকে না ।আবার অনেক শিশু দেখা যায় বুদ্ধি কম স্মৃতিশক্তিও তেমন ভাল নয় ,কিন্তু দেখা যায় সময়ের সাথে সাথে সে ভালো স্মৃতি শক্তির অধিকারী হয় এবং বুদ্ধিমত্তাও বাড়ে ।
তাই শিশুটি কেমন পরিবেশ এবং কাদের সান্নিধ্যে বড় হচ্ছে বিষয়টি বিরাট ভূমিকা রাখে ।
চলুন জেনে নেয়া যাক শিশুদের স্মৃতিশক্তি বুদ্ধিমত্তা বাড়ানো আমরা কি করতে পারি---
আনন্দের মাধ্যমে শেখানোঃ
শিশুকে যেকোনো কিছু শেখানোর সময় শিশুরা যেভাবে আনন্দ পাবে সেভাবে শেখানোর চেষ্টা করুন ।এতে মনে থাকবে বেশি ।খেলতে খেলতে অথবা কবিতার মাধ্যমে শেখানোর চেষ্টা করুন । ছন্দ এবং সংগীতের সুর শিশুর মস্তিষ্কের জিনিসটি মনে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে ।
ছবি ও রঙের ব্যবহারঃ
যেকোনো কিছু শেখানোর সময় শব্দ বা বাক্য গুলো আলাদা রং করে বা রং-বেরংয়ের কার্ড তৈরি করে বা রঙিন ছবি ব্যবহার করলে তা শিশু বেশি সময় মনে রাখতে পারে ।শিশুর শেখার আগ্রহও বাড়ে ।What to do to develop children's intelligence and memory.
চর্চা করানোঃ
যেকোনো বিষয় বারবার চর্চা করানো ।শিশু যখন নতুন কোন কিছু শেখে তা বারবার চর্চা করলে সেটি তার মস্তিষ্কে সেট হয়ে যায় এবং দীর্ঘদিন মনে রাখতে পারে ।how to improve working memory in child.
খেলার মাধ্যমে শেখানোঃ
খেলতে খেলতে শিশুরা কোন কিছু শিখলে সেটি অনেক সময় ধরে মনে রাখে ।তাই যে বিষয়টি আপনি শেখাতে চাচ্ছেন তা দিয়ে মজার কোন খেলা তৈরি করে বা ওকে নিয়েই তৈরি করুন । এতে আপনার শিশু আনন্দ পাবে আবার শিখবেও দ্রুত এবং মনে থাকবে বেশি দিন । বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটবে ।games to improve working memory in child.
গঠনমূলক কাজঃ
অবসর সময়ে গঠনমূলক কাজ করার অভ্যেস করুন । বাগান করা ,গাছ লাগানো ,গাছে পানি দেওয়া ,ছবি আঁকা ,আপনার কাজে সাহায্য করা ।আর নিজের কাজ নিজে যেন করে সেদিকে সচেতন করা ।এতে শিশু দায়িত্বশীল ও কর্মঠ হবে ।How to make child memory sharp.
ব্যায়াম বা শরীরচর্চাঃ
প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করার অভ্যাস করুন।এতে শরীর মস্তিষ্কের ও শরীরের কর্মক্ষমতা বাড়বে ।খাওয়ার প্রতি অনীহা থাকলে তাও দূর হবে ।
গল্প বলার অভ্যাসঃ
শিশুদের গল্প শুনতে খুব ভাল লাগে ।তাই শিশুর বয়স অনুযায়ী গল্পের বই কিনে দিতে পারেন ।নিজে শিক্ষনীয় গল্প শোনাতে পারেন এবং আপনার সন্তানকে বলুন নিজে থেকে গল্প বলতে এটি মেধা বিকাশ ও স্মৃতিশক্তি বিকাশে অনেক কাজে লাগে ।
প্রশ্ন করুন এবং প্রশ্ন করার অভ্যেস করুনঃ
যেকোনো বিষয়ে প্রশ্ন করুন এবং শিশু প্রশ্ন করলে তার উত্তর সুন্দর করে দেওয়ার চেষ্টা করুন ।কারণ শিশুরা বড়দের কাছ থেকেই বেশি শিখে থাকে । প্রশ্ন করার মাধ্যমে শিশুরা নতুন কোন বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে ।
ভ্রমণঃ
অবসর সময় বাইরে ঘুরতে নিয়ে যান ।সেটা দর্শনীয় স্থান হতে পারে ,হতে পারে বইমেলা বা মিউজিয়াম ।বাড়িতে ফিরে তার সাথে কি কি দেখল তা নিয়ে আলোচনা করুন এতে ব্রেনের কর্ম ক্ষমতা বাড়বে ।
কোন জিনিসটা তার ভাল লাগলে ও কোন জায়গা যেতে তার বেশি ভালো লাগে বিষয়গুলো নিয়ে তার সাথে আলোচনা করুন ।Games to improve working memory in child.
নেতিবাচক পরিবেশঃ
আপনার শিশুকে পজিটিভলি ট্রিট করুন ।কোন অন্যায় করলেও দোষারোপ না করে বুঝিয়ে বলুন ।একটি শিশুর কোন দোষ ধরে লাভ নেই কারণ ও আশেপাশে যা দেখে তাই শেখে ।তাই তার পরিবেশটি ঠিক করুন নেগেটিভ কিছু করলে ধমক বা শাসন না করে বুঝিয়ে বলুন ।গল্পের মাধ্যমে শেখান ।
অনেকে অল্পতেই রেগে যায় ধমক দেয়, রাগারাগি করে ,অনেকে আবার মারধর করে ।লক্ষ্য করলে দেখবেন একটু আদর করলে মারধর ,বকা সব ভুলে যায় ।তাই শিশুকে যেকোনো কিছু বুঝিয়ে বলুন ওর বাজে অভ্যাস বা কর্মকান্ডের ভালো ও খারাপ দিকটি বলে বোঝান ।
পুরোপুরি না বুঝলেও শিশু অনুধাবন করতে পারবে ওর কাজটি করা ঠিক হয়নি ।
সারাক্ষণ নেগেটিভলি ট্রিট করলে শিশুর মনে ও মস্তিষ্কে এর প্রভাব পড়ে ।মস্তিষ্ক তার কর্ম ক্ষমতা হারায় সে ঠিক ভাবে চিন্তা করতে পারে না ।
উৎসাহ দিনঃ
যেকোনো ভালো কাজে উৎসাহ দিন ।সে কাজ ছোট বা বড় যাই হোক না কেন ।উৎসাহ দিলে শিশুর মধ্যে নতুন কিছু করার প্রেরণা বাড়বে ও মস্তিষ্কে প্রভাব পড়বে । আনন্দের সঙ্গে কোন কিছু করলে তার মনেও থাকবে ।
ভালো গুণ শেখানঃ
শিশুদের ভালো গুণগুলো শিশুকাল থেকেই শেখানোর চেষ্টা করুন ।একটি শিশু তার প্রিয় মানুষটির কথা সবচেয়ে বেশি মনে রাখে ।
শিশুর খাবারঃ
শিশুর বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এবং সুস্থ থাকতে খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।শিশুর জন্মের পর ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ান ।বুকের দুধে শিশু তার প্রয়োজনীয় সকল পুষ্টি উপাদান পেয়ে যাবে ।
৬মাস বয়সের পর থেকে শিশুদের খাবার তালিকায় আস্তে আস্তে ভিটামিন ও মিনারেল যুক্ত খাবার গুলো যোগ করুন ।কারণ পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর মস্তিষ্কের গঠন হয় ।When does a baby's memory develop?
তাই এই পর্যন্ত আমাদের শিশুর ক্যালরি চাহিদা ঠিক রাখতে হবে ।এক বছর পর থেকে আপনি আপনার বাচ্চাদের খাবারে চিনির বিকল্প হিসেবে মধু ব্যবহার করতে পারেন ।ড্রাই ফ্রট (বাদাম কিসমিস ,চেরি ,খেজুর )খাওয়াতে পারেন ।
প্রতিদিন একটি ডিম ,পরিমাণমতো দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার ,কলা এবং মাছ রাখুন ।সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখুন ।আয়োডিনযুক্ত খাবার দিন ।
জন্মের পর শিশু থাকে কাদামাটির মত ।আপনি তাকে যেভাবে গড়তে চাইবেন সেভাবেই গড়ে উঠবে ।মেধা কম বলে শিশুকে কখনো পরিহাস করবেন না এতে শিশুর কোমল মনে প্রভাব পড়ে এবং হীনমন্যতায় ভোগে ।
কোন কিছু করার ইচ্ছা বা আগ্রহ থাকলেও তার মধ্যে; আমি কি পারব ?আমি পারবোনা ,আমাকে দিয়ে হবে না ,এরকম মন-মানসিকতা কাজ করতে থাকে ।
শিশুকাল থেকে নেগেটিভ পরিবেশে বড় হলে এবং নেগেটিভ কথা শুনলে শিশুর মনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়ে ,বড় হয়েও তার শিক্ষাজীবন এবং কর্মক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে ।
সন্তান আপনার ।বাবা-মা প্রধান ভূমিকা পালন করে একটি শিশু বেড়ে ওঠায় ।শিশুদের বুদ্ধি বিকাশে ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে বাবা মাকেই এগিয়ে আসতে হবে ।সন্তানের বুদ্ধি কম বা পড়া মনে রাখতে পারে না ,অভিযোগগুলো করি।অভিযোগ না করে সমস্যাটা কোথায় সেটা বের করে দেরি হওয়ার আগেই সমাধানের চেষ্টা করুন ।
সবাই আপনার শিশুর ভুলটা ধরিয়ে দেবে ।সমাধানটা কিন্তু বাবা-মাকে করতে হবে ।
সবাই ভাল থাকবেন ।সুস্থ থাকবেন ।
আল্লাহ