শীতের রোগ বালাই থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায়। Ways to Stay Safe From Winter Diseases

 শীতে সুস্থ থাকবেন কিভাবে?




আমাদের দেশে সাধারণত শীতকাল বেশি দিন স্থায়ী হয় না। শীতকাল আসার সাথে সাথে প্রকৃতিও সাজে নতুন  সাজে। আবহাওয়ার আমূল পরিবর্তন আসে। প্রকৃতির সাথে সাথে আমাদের প্রত্যাহিক জীবনেও এর প্রভাব পড়ে। 

বাতাসের আর্দ্রতা কমে যায়, বাতাসে ধুলাবালির পরিমাণ ও দূষণের পরিমাণ বেড়ে যায় , তাপমাত্রা কমে যায় ।How can we Prevent Winter Diseases ?

 বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব এনজাইম আছে তা স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাপমাত্রায় তাদের কার্যক্ষমতা কমে গিয়ে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায় । 

শীতকালে বাতাসের তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা কমে যাওয়ার ফলে আমাদের শ্বাসনালীর স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হ্রাস পায় এবং ভাইরাসের আক্রমণ সহজ করে ।How Can We Protect Ourseleves From Cold Winter ?

 শীতের শুরুতে আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে সাথে জ্বর, সর্দি ও কাশি যেন আঁকড়ে ধরে। শ্বাসতন্ত্রের রোগ বেশি দেখা যায় । জ্বর , সর্দি-কাশি তো আছেই কিছু ক্ষেত্রে গলা ব্যথা দেখা দেয়। 

গলায় খুসখুস ভাব দেখা দেয়, নাক বন্ধ হয়ে যায় ,নাক দিয়ে ক্রমাগত পানি ঝরতে থাকে ,হাঁচি আসে সাথে সাথে মাথা ব্যাথা ,মাংসপেশির ব্যথা ,শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা ,দুর্বল লাগা, খাবারে অরুচি দেখা দেয় ,শুকনা কাশি ও হালকা জ্বর হতে পারে । 

এসব রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে ভাইরাস। আবহাওয়ার শুষ্কতার কারণে অ্যালার্জি ও অ্যাজমার সমস্যা অনেক বেড়ে যায়। How To Stay Well In Winter.


 চোখ উঠা ,ডায়রিয়া ,আমাশয় ,খুশকি ,খেোস পাঁচড়ার(Winter Diseases) প্রকোপ  দেখা যায় এই শীত ঋতুতে ।Winter Wellness Tips.

 ১.সর্দি কাশি ও জ্বরঃ

শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় শীত আসলেই সর্দি-কাশি প্রকোপ সবচেয়ে বেশি দেখা যায় শিশু এবং বয়স্কদের । আক্রান্ত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস, লালা ,হাঁচি -কাশি থেকে নিঃসরিত রোগের ভাইরাসের মাধ্যমে সর্দি-কাশি সংক্রমণ হয় ।

এর ফলে রোগীর জ্বর ,সর্দি -কাশি ,গলাব্যথা , নাক দিয়ে অনবরত পানি পড়া, খুসখুসে কাশি ,গলা ব্যথা ,বুকে ও পিঠে ব্যথা অনুভূত হতে পারে ।Ways To Prevent Illness.

 শীতে এসব অসুখ এর হাত থেকে বাঁচতে ও সুরক্ষিত থাকতে এবং সংক্রমণ ঠেকাতে আমরা কিছু ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করতে পারি । চলুন জেনে নেই উপায় গুলো কি কি -

 আদা ,লেবু ও মধুঃ

 শীতের কমন সমস্যা সর্দি-কাশি থেকে নিরাপদ থাকতে আদার জুড়ি নেই ।ঠান্ডার সমস্যা থেকে বাঁচতে আদা খুবই কার্যকরী ।এক কাপ পানিতে আদা কুচি দিয়ে পানি ফুটিয়ে তাতে লেবুর রস ও মধু যোগ করুন ।আদা ,লেবু ও মধু তিনটি প্রাকৃতিক এন্টি-অক্সিডেন্ট । 

নিয়মিত সকালে খালি পেটে এই পানি পান করলে শীতের ঠান্ডার অসুখ থেকে বাঁচা যায় সহজেই । এছাড়াও শরীরে জমে থাকা টক্সিন দূর করতে এই পানীয়র জুড়ি নেই ।এছাড়াও আদার রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে উপকার পাওয়া  যায় ।

সকালে খালি পেটে হালকা গরম পানি ,মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে  সর্দি- কাশি দূর হয় ।লেবুর ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট  এই সুরক্ষা দেয় । 

 তুলসী পাতা 

 তুলসী পাতায় আছে  বিটা ক্যারোটিন ও ইউনিজল যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ব্যাকটেরিয়া রোধী । প্রতিদিন দুই তিনটি পাতা  চিবিয়ে খেলে বা রস করে খেলে গলা খুসখুস করলে ও কাশিতে আরাম পাওয়া যায় । 


 সরিষাঃ

 শীতে বাতাসে ধুলাবালির পরিমাণ বেশি থাকে ।এই ধুলাবালি ও ঠান্ডায় শ্বাসনালী সংকোচিত হয়ে যায় ফলে শ্বাসকষ্ট হয় ।এই সমস্যা দূর করে এবং বুকে জমে থাকা কফ কেউ  তরল করে আরাম দেয় সরিষা ।

কাশিতে সরিষার তেলে রসুন ,কালোজিরা মিশিয়ে গরম করে সেই মিশ্রণ বুকে-পিঠে ,হাতের তালু ও পায়ের তালুতে ,গলায় মালিশ করলে আরাম পাওয়া যায় ।সরিষার তেলে পেঁয়াজ ও কাঁচামরিচ ভর্তা  কফ তরল করে ।সরিষা ভর্তা, সরিষা শাক ,কালোজিরা ভর্তা সর্দি-কাশি  কমাতে সাহায্য করে ।

 সুপঃ

 শীতে প্রচুর শাকসবজি পাওয়া যায় ।এগুলো দিয়ে সুপ রান্না করে গরম গরম খেলে  ঠান্ডার সমস্যা তো আরাম পাবেনই আবার শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরনে সাহায্য করে ।প্রচুর পানি পান করতে হবে ।সর্দি ,কাশি ও জ্বর শরীরে পানিশূন্যতা তৈরি করে ।

 সর্দি জ্বর হলে বিশ্রাম নেওয়া খুবই জরুরি ।প্রচুর পানি ,লেবুর রস ,পেয়ারা ,আমলকি ,আনারস জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া জরুরি ।

 সতর্কতাঃ

  •  সর্দি-কাশি যেখানে-সেখানে ফেলা থেকে বিরত থাকুন ।
  • হাঁচি দেওয়ার সময়-এর রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করুন ।রোগির ব্যবহৃত রুমাল ,গামছা ,কাপড় ধুয়ে ফেলতে হবে এবং অন্যদের ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না ।এতে সংক্রমণ বাড়বে ।
  • ঠান্ডা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। খাবার গরম করে খেতে হবে ।
  • খাওয়ার আগে ও মলত্যাগের পর এবং বাইরে থেকে এসে সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে ।

  •  বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত ঠান্ডা পানি পান করা যাবেনা ।
  • স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে ।ভিটামিন-সি ঠান্ডাজনিত রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
  • পর্যাপ্ত গরম কাপড় পরিধান করতে হবে।
  • ধুলাবালি ও দূষণ এড়িয়ে চলতে হবে। বাইরে বের হওয়ার সময় মাস্ক ব্যাবহার করুন। 



  • List Of Winter Illness.

 ২.ডায়রিয়া আমাশয়ঃ

 শীতের ডায়রিয়া কিংবা আমাশয় এর প্রকোপ বেশি দেখা যায় শিশুদের মধ্যে ।দূষিত পানি বা খাবারের সঙ্গে রোগ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে । বাসি -পচা ,ঠান্ডা খাবার ,রাস্তার খোলা খাবার খাওয়া ঠিক নয় ।এগুলো থেকে ডায়রিয়া বা আমাশয় হয়ে থাকে ।

সর্তরকতাঃ

  • ডায়রিয়া বা আমাশয় থেকে রক্ষা পেতে মলত্যাগের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে হবে ।
  • মলত্যাগের পর ও খাওয়ার আগে হাত ভালো করে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে ।
  • ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খাওয়াতে হবে ।শিশুদের বুকের দুধ খাওয়া চালিয়ে যেতে হবে ।বেশি অসুস্থ হলে হাসপাতাল নিতে হবে ।Winter Health Tips.

৩. নিউমোনিয়াঃ

 শীতকালে শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য এটি একটি মারাত্মক অসুখ। ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ এই নিউমোনিয়া। বাংলাদেশের শিশু মৃত্যুর প্রধান কারণ হিসেবে এই রোগটিকে ধরা হয়। তাই প্রাথমিক অবস্থাতেই সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে।

 নিউমোনিয়া থেকে বাঁচতে করণীয়ঃ

  •  শীতের হাত থেকে বাঁচাতে পর্যাপ্ত গরম পোশাক পরিধান করুন ।
  •  গোসলে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করা  থেকে বিরত থাকুন ।
  •  শিশুদের সঠিক যত্ন নিতে হবে সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে ।
  •  হাঁচি-কাশিতে বা অসুস্থ লোকদের  কাছ থেকে শিশুদের দূরে রাখাই ভালো ।
  •  হাঁচি-কাশিতে রুমাল বা টিস্যু ব্যবহারের অভ্যাস করুন । টিস্যু নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলার শিক্ষাদিন ।
  • পুষ্টিকর ও ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ান ।পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করুন ।

 ৪.বাত ব্যথাঃ

 বয়স্কদের এরোগটি  বেশি দেখা যায় । শীতের নড়াচড়া কম হয় এ কারনে রোগের প্রকোপ অনেক বেড়ে যায় ।ঠান্ডাজনিত সমস্যা তো আছেই ।

 বাত ব্যথা প্রতিরোধে করণীয়ঃ

  •  সব সময় গরম কাপড় পরিধান করুন।
  • যতটা সম্ভব নড়াচড়া করার চেষ্টা করুন। এক জায়গায় অনেক সময় বসে বা শুয়ে থাকবেন না।
  • গরম ছ্যাঁক বা ফিজিওথেরাপি নিতে পারেন।
  • বেশি সমস্যাতে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলুন।

৫. চর্মরোগঃ

 শীতকালে  শুষ্ক আবহাওয়ায় ত্বক থেকে আর্দ্রতা  সহজেই বাতাস শুষে নেয়। ফলে ত্বক হয়ে পড়ে শুষ্ক ও রুক্ষ্ম। ঘর্মগ্রন্থি ও তেলগ্রন্থি ঠিকমতো ঘাম ও তৈলাক্ত পদার্থ তৈরি করতে পারে না। ফলে ত্বকে আস্তে আস্তে ফাটল ধরে ও দুর্বল হয়ে যায়। 

এতে করে দেখা দেয় একজিমা ,স্ক্যাবিস, চুলকানি জাতীয় চর্মরোগ। আর এজন্যই ত্বকের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।

 শীতে যেকোনো সমস্যায় ভয় না পেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ভালো থাকুন ,সুস্থ থাকুন।


 


Post a Comment (0)
Previous Post Next Post