শীতের সবজির স্বাস্থ্য উপকারিতা Health Benefits Of Winter Vegetable

শীতকালে সবজী খাওয়ার উপকারিতা

Common Winter Vegetables Bangla



শীতকাল মানেই নানারকম রঙিন শাকসবজি সমাহার। সবজি বাজারে গেলে চোখে পড়ে নানা রঙের শাকসবজি। এগুলো যেমন সুস্বাদু তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। বর্তমানে প্রায় সারাবছরই সব সবজি পাওয়া যায় কিন্তু শীতকালীন সবজির স্বাদ ও গন্ধ শীতকালে বেশি ভালো লাগে ।দামেও থাকে সস্তা  ।তাই শীতকালে রোগমুক্ত ও সুস্থ থাকতে শীতকালীন সবজি বেশি করে খান। 

প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সবজি রাখুন ।আমরা সবজি  রান্না করে বা কিছু সবজি কাঁচা খেয়ে থাকি । শীতকালীন সবজির স্বাস্থ্য ও ত্বকের জন্য তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে পানি ,খনিজ পদার্থ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ।Surpring Health Benefits Of Winter Vegetables.

শীতকালে বেশি চোখে পড়ে গাজর ,মুলা ,শিম ,বাঁধাকপি ,ফুলকপি ,টমেটো ,শালগম ,লাউ ,সর্ষে শাক,পালংশাক ,ধনেপাতা ইত্যাদি ।

চলুন আমরা জেনে নেই এসব সবজীর পুষ্টি উপাদান এবং উপকারিতা সম্পর্কে ---

গাজরঃ

গাজর সাধারণত  শীতকালীন সবজি। তবে বর্তমানে সারা বছরই পাওয়া যায় ।সারা বছর পাওয়া গেলেও শীতেই এর প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায় ।আমরা সাধারণত গাজরের জুস করে, রান্না করে  বা সালাদে খেয়ে থাকি ।

পুষ্টি উপাদানঃ

গাজরের রয়েছে ভিটামিন এ ,সি ,কে ,বি, বি-২, বি-৩ ,বি-৪ , প্রোটিন ,পটাশিয়াম, সোডিয়াম ,আয়রন ,ফসফরাস  ,প্যানটোথেনিক অ্যাসিড, ফোলেট, প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং বিটা ক্যারোটিন ,অতি অল্প পরিমাণে ফ্যাট ।

গাজরের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাঃ

গাজরের  রয়েছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান ।প্রতিদিন একটি গাজর খেলে আমরা কি কি উপকার পেতে পারি চলুন জেনে নেই ---

গাজরে রয়েছে বিটা ক্যারোটিন যা আমাদের লিভারে পৌঁছে ভিটামিন এ তে রূপান্তরিত হয় এবং চোখের রেটিনায় গিয়ে চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।রাতকানা রোগ ভালো করে।

ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে গাজর সাহায্য করে।ফুসফুস ক্যান্সার ,কোলন ক্যান্সার ,প্রোস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। গাজরে থাকা ভিটামিন-এ শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে।

গাজর রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার তাই প্রতিদিন খেলে লিভারের প্রদাহ , হেপাটাইটিস ,সিরোসিস ,লিভার এর কেলস্টেরল  থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

গাজর এন্টি এজিং এর কাজ করে।ত্বককে দাগমুক্ত, সুন্দর ,মসৃণ রাখতে গাজরের জুড়ি নেই । চুল সুন্দর রাখতে গাজর খেতে পারেন ।এন্টিসেপটিক হিসেবে ও গাজর ভালোভাবে কাজ করে ।হূদরোগ থেকে মুক্ত রাখে গাজর। গাজরের ভিটামিন সি-এর দাঁতের মাড়ি  ভালো রাখে ,মুখের দুর্গন্ধ দূর করে ।The Best Winter Vegetables.Stay Fresh This Winter.

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতেও গাজর কার্যকরী ।বাচ্চাদের কৃমির সমস্যার সমাধান ও এই গাজরের  মধ্যে আছে ।২০ - ৪০ মিলি গাজরের জুস খাওয়ালে বাচ্চাদের কৃমি থেকে মুক্তি মিলবে ।


মুলাঃ

মুলা শীতকালের সবজি ।সাদা এবং লাল রঙের মুলা আমাদের দেশে পাওয়া যায় ।মুলা  সালাদ হিসেবে কাঁচা বা রান্না করে খাওয়া হয় । মুলা শাক পাতা ও পুষ্টিগুণে ভরপুর ।

পুষ্টি উপাদানঃ

মুলা পুষ্টি ও ঔষধি গুণে ভরপুর একটি সবজি  ।এতে রয়েছে ভিটামিন বি, সি ,ক্যালসিয়াম ,পটাসিয়াম ,সোডিয়াম ,ফোলেট, ম্যাংগানিজ, কপার ,ম্যাগনেসিয়াম  ।মুলার চেয়ে মুলোর পাতায় পুষ্টি উপাদান বেশি ।এতে ৯৫ ভাগই পানি ।

মূলার পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাঃ

মুলা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে এবং ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে সাহায্য করে ।ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে ।হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় । মুলা শীতলকারক এবং মূত্রবর্ধক তাই কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধ করে ।Sustainable Winter Vegetables;Good For Your Body and Mind.

মুলাতে রয়েছে ফাইবার যা অর্শ বা পাইলস এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে । ফাইবার খাবার হজমে সাহায্য করে ।যকৃতের রোগ এবং জন্ডিস হলে মুলা বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ।বমি বমি ভাব দূর করে ,মুখে রুচি বাড়ায় ।

শিমঃ

শিম শীতকালীন সবজির মধ্যে অন্যতম ।শিম সাধারণত আমরা রান্না করে খেয়ে থাকি ।বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকাতেই সিম জন্মে থাকে ।বানিজ্যিক ভাবে শিম চাষ করা হয় ।

শুকনা শিমের বিচির ডাল রান্না করে খাওয়া হয় ।

পুষ্টি উপাদানঃ

শিমে রয়েছে ভিটামিন বি-১ ,বি-২, ক্যালসিয়াম ,লৌহ, খাদ্যশক্তি ,শর্করা ,প্রোটিন ,ফাইবার, আমিষ।

শিমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাঃ

রয়েছে প্রচুর ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে ডায়রিয়া প্রতিরোধ করে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হূদেরাগের ঝুঁকি কমায় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে সিমের সিলিকন উপাদান হারকে মজবুত করে চুল পড়া রোধ করে চুলকে স্বাস্থ্য ঠিক রাখে 

শিশুদের অপুষ্টি দূর হতো করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই উপকারী 


বাঁধাকপিঃ

বাঁধাকপি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি শীতকালীন পাতা জাতীয় সবজি ।এটি কাঁচা অবস্থায় সালাদে, এবং রান্না করে খাওয়া হয় ।অনেকে বাঁধাকপির জুস খেয়ে থাকেন ।বাধাঁকপি বিভিন্ন  রঙের হয়ে থাকে ।

পুষ্টি উপাদানঃ

খাদ্যশক্তি ,শর্করা ,ফাইবার, চর্বি ,আমিষ ,থায়ামিন, রিবোফ্লোবিন, ম্যাঙ্গানিজ ,ফসফরাস ,জিংক , ম্যাগনেসিয়াম , ক্লোরাইড ,ভিটামিন সি ,কে ,বি-৬ ইত্যাদি পাওয়া যায় ।

বাঁধাকপির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাঃ

যারা ওজন কমাতে চান বাঁধাকপি তাদের জন্য বেস্ট অপশন ।এতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার যা ক্যালরি ছাড়াই পেট ভরতে সাহায্য করে । বাঁধাকপি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার প্রতিরোধ করে ।এর রস আলসার প্রতিরোধ  করে । শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরকে রোগমুক্ত রাখে ।বাঁধাকপি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে,খাদ্য হজমে সাহায্য করে ।এর বিটা ক্যারোটিন ত্বকের সুরক্ষা করে ,শরীর ও ত্বকে প্রদাহ দূর করে। চুল ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ।গর্ভাবস্থায় বাঁধাকপি ডায়েটে রাখা উচিত ।

ফুলকপিঃ

ফুলকপি একটি খুব জনপ্রিয় শীতকালীন সবজি ।এটি রান্না করে, ভাজি, ভর্তা খাওয়ার পাশাপাশি নুডলস ,পাস্তা ,সালাদ ,পাকোড়া ব্যবহার করা হয়। বাচ্চাদের তাই খুব প্রিয়  সবজি ।

পুষ্টি উপাদানঃ

ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, কে ,বি৬, ক্যালসিয়াম,মিনারেল,প্রোটিন,ফসফরাস ,পটাশিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ ।

ফুলকপির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতাঃ

ফুলকপিতে রয়েছে সালফোরাফেন যা ক্যান্সারের সেল ধ্বংস করে এবং টিউমারের বৃদ্ধি প্রতিহত করে ।এটি উচ্চ রক্তচাপ কমায় এবং কিডনি ভালো রাখে ।শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে ,শরীরকে সুস্থ এবং কর্মক্ষম রাখে ।

ফুলকপিতে আছে কলিন, ও ভিটামিন বি যা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে  দ্রুত কোন কিছু শিখতে সাহায্য করে। এর ফাইবার খাদ্য হজমে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।


লেখাটি খুব বড় হয়ে যাচ্ছে তাই বাকি সবজি গুলো নিয়ে থাকবে পরবর্তী পর্ব ।তাতে থাকবে টমেটো, লাউ ,শালগম ,সরষে শাক, পালং শাক ,ধনেপাতা এবং শীতের সবজি খাওয়ার কিছু সতর্কতা।

আশা করি সাথে থাকবেন।আজ এ পর্যন্তই সবাই ভাল থাকবেন ।কিছু জানার থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে ভুলবেন না।

     আল্লাহ হাফেজ 






Post a Comment (0)
Previous Post Next Post