শীতের পোশাকের যত্ন (Winter clothes care Tips)
শীত মৌসুম এসেই গেল ।সেটি জানান দিচ্ছে কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সিগ্ধ সকাল ঘাস,রাস্তাঘাট,গাছের উপর জমে থাকা শিশির ।কাথায় আর মানছে না শীত ।এবার পালা এসে গেছে কম্বল আর লেপের । সাথে সময় এসে গেছে শীতের পোশাক গুলোকে ব্যাবহারের জন্য বাক্স থেকে বের করে নেওয়ার জন্য ।Winter clothes care Tips.
বাইরে বের করেই কি শীতের পোশাক ,লেপ,কম্বল ব্যাবহার করা যাবে?
উত্তরঃ না ,যাবে না ।কেন ? চলুন জেনে নেওয়া যাক-
আমাদের দেশে শীত কাল বেশিদিন স্থায়ী হয় না ,তাই শীতের পোশাক গুলি বছরের প্রায় বেশিটা সময় বাক্স বা আলমারিতে থাকার ফলে কাপড় গুলিতে থাকে ভ্যাপসা ও নেতিয়ে পড়া ভাব সাথে থাকে একটা গোমট গন্ধ ,পোকার আক্রমনের সম্ভাবনা তো আছেই । তাই কাপড় গুলো আলমারি বা বাক্স থেকে বের করে সরাসরি গায়ে না দেওয়ায় ভালো ।এ গুলি মোটেই স্ব্যাস্থ সম্মত নয় ।
কাপড়ের এই গোমট গন্ধ,স্যাতঁস্যাতেঁ ভাব থেকে শরীরে অ্যালাজি জনিত সমস্যা ,র্যাশ উঠা ও শ্বাসকষ্ঠ জনিত সম্যাসা হতে পারে । তাই শীতের কাপড় বাক্স থেকে বের করেই ব্যাবহার না করে ব্যাবহারের পূর্বে বিশেষ কিছুদিক খেয়াল রাখতে হবে ।
শীতের কাপড় পরীধানের পূর্বে করনীয়(What to do before wearing winter clothes)
শীতের পোশাক বলতে সোয়েটার,জ্যাকেট ,মোজা ,টুপি ,কম্বল ,লেপ এসবই ।কাপড় গুলি ব্যাবহারের জন্য বের করে -
লেপ কম্বল দুই তিন দিন কড়া রোদ দিয়ে ঝেড়ে পরিষ্কার করে ব্যাবহার শুরু করুন ।
লেপের ও মোটা কম্বলের কাভার ভালো করে ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নিন ।
উলের সোয়েটার না ধুয়ে হালকা রোদ দিয়ে নরম ব্রাশ দিয়ে ব্রাশ করে নিলেই ভালো ।
কোট বা লেদারের কাপড় হালকা রোদ দিয়ে ব্রাশ দিয়ে ঝেরে নিন ।
কাশ্মীরী চাদর ,পশমী চাদর ওঅ্যনান্য চাদর হালকা রোদে দিয়ে ব্যাবহার শুরু করতে পারেন ।
মোজা ,মাফলার ,টুপি আলমারি থেকে বের করে রোদ দিয়েই ব্যাবহার শুরু করতে পারেন ।
এবার আসা যাক পুরো শীত জুড়ে কিভাবে আপনার প্রিয় শীতের পোশাকটির যত্ন করবেন-
সোয়েটার ঃ
সোয়েটার ছোটথেকে বড় সবাই ব্যাবহার করে থাকি । মূলত আমরা উলের বা পশমের সোয়েটার ব্যাবহার করি ।উলের সোয়েটার ধোয়ার প্রয়োজন হলে মৃদু ডিটারজেন্ট বা শ্যাম্পু নরমাল পানিতে ভালো করে মিশিয়ে ৫-৬ মিনিট ভিজিয়ে রেখে ধুয়ে নিন ।কাপড় বেশি জুড়ে রগরাবেন না ,হালকা ভাবে কচলালেই সোয়েটার পরিষ্কার হয়ে যায় ।
হালকা রোদে বা ছায়ায় শুকিয়ে নিন ।কড়ারোদে শুকালে কাপড়ের রং নষ্ট হতে পারে ।অবশ্যাই রঙিন এবং সাদা কাপড় আলাদা ধোয়ে নিন যেন রং লেগে কাপড় নষ্ট না হয় ।
পশমের সোয়েটার আলাদা করে ধুবেন পশমী কাপড় থেকে পশম উঠার সম্ভাবনা থাকে ।
লিনেন সোয়েটার হলে হলকা গরম পানিতে ডিটারজেন্ট ভালো ভাবে মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট পর ধুয়ে রোদে শুকিয়ে ব্যাবহার করুন ।
কাপড় ধোয়ার সময় রঙ্গিন কাপড়ে ভিনেগার এবং সাদা কাপড়ে লেবুর রস ব্যাবহার করলে কাপড়ের উজ্জ্বলতা বজায় থাকে ।
ফ্লানেলের কাপড় ও চাদর বা শালঃ
ফ্লনেলের কাপড়ের ক্ষেত্রেও শ্যাম্পু দিয়ে ধুলে কাপড়ের উজ্জ্বলতা ঠিক থাকে ।শ্যাম্পু দিয়ে ঘন্টাখানিক ভিজিয়ে রেখে আলতো হাতে কচলিয়ে ধুয়ে নিলেই পরিষ্কার হয়ে যায় ।বেশি ময়লা হলে হালকা গরম পানি ব্যাবহার করতে পারেন ,পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিলেই হলো ।
চাদর ও শাল অনেকেই ব্যাহার করেন শীতে ।যদি ধোয়ার প্রয়োজন হয় তবে আপনার কাশ্মিরি শালটি বেবি শ্যাম্পু দিয়ে হালকা হাতে ধুয়ে নিন ।পানি থেকে তুলার সময় হাতের মধ্যে নিয়ে জরসর করে তুলবেন ,কাপড় মোচড়াবেন না ।খুব আস্তে চেপে বাড়তি পানি ফেলেদিন তার পর ছায়ায় বা হালকা রোদে শুকিয়ে নিন ।তবে ড্রাই ওয়াশ করাই ভালো ।অন্যান্য চাদর মৃদু ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিন ।
কোট ও লেদারের জ্যাকেটঃ
কোট ও লেদারের জ্যাকেটটি বাড়িতে ধোয়া যাবে না । ব্যাবহারের পর হালকা রোদ দিয়ে নরম ব্রাশ দিয়ে ঝেরে নিন ।যদি বেশি ময়লা হয় তবে ভালো কোনো লন্ড্রিতে ড্রাই ওয়াশ করতে দিন ।কোন দাগ লেগে গেলে ঘষাঘষি না করে অন্য নরম কাপড় মৃদু ডিটারজেন্টে ভিজিয়ে ব্লটিং করে দাগ ওঠান ।আলমারিতে রাখার সময় মোটা হ্যাংগারে ঝুলিয়ে কাধের কাছে প্লাস্টিক দিয়ে রাখুন এতে ময়লা জমবে না ।
ভেলভেটঃ
শীতে ভেলভেট কাপড়ের পোশাক পড়তে যেমন আরাম তেমনি গর্জিয়াস ।ভেলভেট কাপড় ড্রাই ওয়াস করতে হবে ।এতে ময়লা লাগলে শুকিয়ে গেলে নরম ব্রাশ দিয়ে ঝেরে ফেলুন ।বেশি ময়লা হলে লন্ড্রিতে পাঠান ড্রাই ওয়াসের জন্য ।
মোজা , মাফলার ও টুপি ঃ
শীতে সবচেয়ে বেশি ময়লা হয় মোজা মাফলার ওটুপি ।আর তাই কয়েক দিন পরপর এগুলো সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে নিবেন ।যেহেতু এগুলি বেশি ময়লা হয় তাই তিন চার জুড়া কিনতে পারেন।
সর্তকতাঃ
- উলের সোয়েটার ধোয়ার সময় বেশি রগরাবেন না এতে উল নষ্ট হয়ে যাবে। উলের কাপড় বা যে কোন ভাড়ী কাপড় রশিতে বা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে শুকাতে দিলে কাপড়ের সাইজ নষ্ট হয়ে যায় ।তাই সমতল জায়গায় পরিষ্কার কাপড়ের উপর বিছিয়ে শুকিয়ে নিন।
- ইস্ত্রি করার সময় আপনার সোয়েটার বা শাল উল্টে নেওয়া উচিত ।স্টিম দিয়ে ইস্ত্রি করতে পারেন ,গরম আয়রন সোয়েটারে না লাগানোই ভালো।আয়রন করার সময় পাতলা পরিষ্কার কাপড় উপরে ব্যাবহার করতে পারেন এতে আপনার শীতের পোষাক টি ভালো থাকবে।
- শীতের কাপড় ওয়াশিং মেশিনে না ধুয়ে হাতে পরিষ্কার করাই ভালো।
- শীতের পোষাক কখনো তারের হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখবেন না ,এতে কাপড়ের শ্যাপ নষ্ট হয়ে যায় ।মোটা কাঠের বা প্লাস্টিকের হ্যাংগারে ঝুলিয়ে রাখুন।
- শীতের পোষাক ভাজ না করে রোল করে রাখুন। ভাজ করলে ভাজের দাগ পরতে পারে।
- শীতের পোষাক ওয়াশিং মেশিনে পরিষ্কার না করাই ভালো।যদি করতেই হয় তবে উলেন অপশনে দিয়ে কাপড় পরিষ্কার করুন।
- বাড়িতে এবং বাহিরে পড়ার জন্যা আলাদা সোয়েটার ব্যাবহার করুন।
- রান্না বা বাড়ির অন্যান্য কাজ করার সময় এপ্রন ব্যাবহার করবেন এতে করে দাগ ময়লা কাপড়ে কম লাগবে।
- শতের পোশাক পরার পর ব্রাশ দিয়ে ঝেরে রাখুন।কারন শীতে এমনিতেই বাতাসে ধুলোবালি বেশি থাকে।
- পোশাকে দাগ লেগে গেলে বেশি দিন ফেলে রাখবেন না। এতে দাগ সহজে উঠতে চায় না।
- কাপড় কোথাও ছোট খাট ছেড়া ফাটা বা বোতাম খসে গেলে সাথেসাথে ঠিক করে নিন বেশি দিন ফেলে রাখবেননা।
- ছোট বাচ্চাদের শীতের পোশাক একটু বেশিই লাগে আর রোদ যেহেতু কম থাকে কাপড় শুকাতেও দেরি হয় ।তাই বাচ্চাদের জন্য শীতের পোশাক একটু বেশিই কিনবেন এবং নিয়মিত পরিষ্কার করবেন।
অবশ্যাই খেয়াল রাখতে হবে শীতের পোশাক অন্যান্য কাপড়ের থেকে ভিন্ন তাই যত্ন টাতো একটু ভিন্ন হবেই। একটু অবহেলায় বা অযত্নের কারনে যেন আপনার শখের পোশাকটি নষ্ট হয়ে না যায়।অযথা কাপড় দিয়ে আলমারি ভর্তি না করে যে পোষাকটি আপনি ব্যাবহার করবেন না সেটি গরিব মানুষ কে দান করে দিন এতে শীতে একজন গরিব মানুষ শীতের কষ্টথেকে বেচে য়াবে আপনি নতুন একটি পোশাক কিনতে পারছেন।
কারো লেখা নিয়ে কিছু বলার থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন । শীতের শেষে কিভাবে আপনার প্রিয় শীতের পোষাক যত্ন করে তুলে রাখবেন লেখাটি পেয়ে যাবেন।
এই শীতে সবাই ভালো থাকেন সুস্থ থাকুন আল্লাহাফেজ ।