শীতে চুলের যত্ন Winter Hair Care Tips

শীতকালে চুল পড়ার কারণ?

শীতে চুলের যত্ন Winter Hair Care Tips
শীতে চুলের যত্ন Winter Hair Care Tips

সারা বছরই চুলের যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু শীতকালে চুল শুষ্ক ও রুক্ষ ভাবের কারণে আমাদের চুল হয়ে পড়ে প্রানহীন ,তাই যত্ন একটু বেশি প্রয়োজন সাথে প্রয়োজন একটু সচেতনতা। কেন আমরা শীতে চুলের যত্ন একটু বেশি নিব চলুন জেনে নেওয়া যাক -


শীতে চুলের সমস্যা

 ১. শীতে চুলের খুশকি মাথার ত্বকের সমস্যা(Scalp Problem) 

 শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কম থাকায় মাথার তালু শুষ্ক ও রুক্ষ্ম হয়ে যায়। অতিরিক্ত   স্টাইলিং যন্ত্র (হেয়ার স্ট্রেইটনার, হেয়ার ড্রায়ার, ক্রালিং টুল) ব্যবহারে সমস্যা আরও বেড়ে যায়। এই শুষ্ক ত্বকের আরো বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় খুশকির সমস্যা।

তবে আপনার ত্বক যে ধরনেরই হোক না কেন শীতকালে খুশকি সমস্যা কমবেশি সবারই হয়। ত্বকের মরা কোষ গুলি মূলত খুশকি। নিয়মিত চুল পরিষ্কার না করলে এ সমস্যা আরো বেশি দেখা দেয়।

 ২.চুলের বৃদ্ধি কমে যাওয়া(Reduced Hair Growth)

 শীতকালে চুলের বৃদ্ধি ও অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেক কমে যায় ।মাথার ত্বকের শুষ্কতা ও খুশকির কারণে চুল পড়ে যায় অনেক।

 ৩.ঘর্ষণের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ চুল(Hair Damaged by Friction)

 অতিরিক্ত শীতে আমরা বেশিরভাগ সময় উলের টুপি, মাফলার বা স্কার্ফ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখি ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য। এই কারণে কাপড়ের ঘর্ষণ এর চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চুল ভেঙ্গে পড়ে যায়। তাই প্রয়োজন আলাদা যত্নের। Winter Hair Care Tips.

৪. ড্রাই এবং ফ্রীজিং হেয়ার(Dry and Frizzy Hair)

 শীতে বাতাসের আদ্রতার পরিমান কমে যাওয়ায় চুল শুষ্ক হয়ে যায়। তৈলাক্ত চুলেরও এ সমস্যা হয়ে থাকে। হঠাৎ করে আবহাওয়া পরিবর্তনের জন্য এই সমস্যা হয়ে থাকে। চুল শুষ্ক রুক্ষ হওয়ার ফলে চুল জট পাকিয়ে যায়। খুব সহজে তাই চুলের এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

Read Also:

শীতের রোগ বালাই থেকে সুরক্ষিত থাকার উপায়।

এই শীতে আপনার শিশুকে সুস্থ রাখবেন কীভাবে? 

শীতের সবজির স্বাস্থ্য উপকারিতা

শীতের পোশাকের সঠিক যত্ন |


শীতকালীন চুলের যত্নের রুটিন (Winter Hair Care Routine)

চলুন জেনে নেওয়া যাক, শীতের শুষ্কতা থেকে চুলকে রক্ষা করার জন্য আমরা কি কি করতে পারি -

১. তেলের ব্যবহার

চুলের জন্য নারিকেল তেল সবচেয়ে ভালো ।এই তেলে আছে কিউটিকল ভেদ করে একদম কটেস্কে এ গিয়ে আদ্রতা দেওয়ার ক্ষমতা।  নারিকেল তেলে আছে ন্যাচারাল এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল ক্ষমতা যা মাথার ত্বকে জীবাণু দূর করে ত্বকের বিভিন্ন চর্মরোগ থেকে রক্ষা করে।

শীতের সিজনে নারিকেল তেল জমে যায় আবার শীতের ঠান্ডা তো আছেই। তাই চুল পড়া রোধ করতে হট অয়েল ট্রিটমেন্টের জুড়ি নেই। আপনি বাড়িতে নিজেই তৈরি করে ব্যবহার করতে পারবেন। আপনি চাইলে শুধু নারিকেল তেল বা বিভিন্ন তেলের মিশ্রণ তৈরি করতে পারেন।Winter Hair Care Home Remedies.

যেমন - নারকেল তেলের সাথে অলিভ অয়েল, বাদাম তেল, ক্যাস্টর অয়েল, তবে তেল যেন সমান অনুপাতে হয়। তেল স্টিলের চামচ বা বাটিতে ১৫ সেকেন্ড গরম করে মাথার তালুতে আলতোভাবে মাসাজ করুন ১৫ মিনিট। 

অয়েল মাসাজ মাথার তালুতে রক্ত চলাচল সচল রাখে, চুল লম্বা করে ,চুল পড়া বন্ধ করে ,মাথার তালুর মৃত কোষ দূর করে, এছাড়াও চুলের ফাটা রোধ করে এবং ক্ষতিগ্রস্ত চুলকে রিপিয়ার করে ।তাই সপ্তাহে একদিন আপনি এই হট অয়েল ট্রিটমেন্ট করতে পারেন।

 ২.চুল আঁচড়ানো

নিয়মিত চুল আঁচড়াতে হবে ।রাতে শোয়ার আগে চুল ভালোভাবে আচড়ে নিন। চুল আঁচড়াতে আপনি প্লাস্টিক বা কাঠের চিরুনি ব্যবহার করতে পারেন।Hair Care During Winter.

৩. শীতে চুল ধোয়া বা পরিষ্কার করা

 ঘন সুন্দর এবং সিল্কি চুল পেতে কে না চায়।শীতে চুলকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতে চুলের ধরন বুঝে শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। চুলের ধরন অনুযায়ী আপনি সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন চুল পরিষ্কার করতে পারেন। 

খেয়াল রাখবেন সরাসরি চুলে শ্যাম্পু ব্যবহার করবেন না চুল পানি দিয়ে ভিজিয়ে  বা শ্যাম্পুতে একটু পানি মিশিয়ে ফেনা তৈরি করে তারপর চুলে   ব্যবহার করবেন। 

চুল ধোয়ার সময় অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করবেন না, অতিরিক্ত শীতে হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন। তবে নরমাল পানি সবচেয়ে ভালো চুলের জন্য।

৪. কন্ডিশনিং 

চুলে শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই চুলের ধরন বুঝে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। কন্ডিশনিং না করলে চুল রুক্ষ হয়ে যাবে। চুল ধোয়ার পূর্ব তেল ব্যাবহার করলে সেটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে।

৫. চুল শুকানো 

চুল ধোয়ার পর শুকনো তোয়ালে দিয়ে ভালোভাবে মাথার তালু ও চুল মুছতে হবে। বেশিক্ষণ চুল ভেজা থাকলে ঠান্ডা লাগতে পারে। প্রাকৃতিক ভাবে চুল শুকানোর চেষ্টা করুন। শীতে হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করলে চুল আরও বেশি রুক্ষ   হয়ে যায়। ভেজা চুলে বাইরে না বেরোনোই ভালো এতে চুলের ময়লা বসে যায় এবং চুলের ক্ষতি করে।

 ৬.শীতের টুপি বা স্কার্ফ এর ব্যবহার

 শীতের ঠাণ্ডা হাত থেকে মাথা ও কান বাঁচাতে আমরা বিভিন্ন ধরনের টুপি বা স্কার্ফ ব্যবহার করে থাকি। এগুলোর সাথে চুলের ঘর্ষণে চুলের ক্ষতি হয় তাই আমরা সিল্কের স্কার্ফ ব্যবহার করতে পারি সিল্কের ফেব্রিক্স অনেক মুলায়েম হয়ে থাকে।

৭. শীতে বাড়িতে তৈরি প্যাক

শীতে আমরা চুলের বিভিন্ন সমস্যায় বাড়িতে থাকা বিভিন্ন উপাদান দিয়ে খুব সহজেই প্যাক তৈরি করে চুলের যত্নে ব্যবহার করতে পারি। 

বাদাম তেল ,নারিকেল তেল ,সরিষার তেল, অলিভ অয়েল ,ক্যাস্টর অয়েল এবং মেথির গুঁড়া সবগুলো উপাদান সমপরিমানে নিয়ে ১০-১৫ সেকেন্ড গরম করে মাথার ত্বকে হালকা হাতে মাত্র ২০ মিনিট লাগিয়ে নিন তারপর সারারাত রেখে সকালে শ্যাম্পু করে নিন। 

আশা করি এতে শীতের চুলের যতগুলো সমস্যা আছে সবগুলোই সমাধান হবে। তবে যদি আপনার বাসায় সবগুলো উপাদান না থাকে তাহলে নারিকেল তেল ,সরিষার তেল এবং অলিভ অয়েল সাথে মেথির গুঁড়া মিশিয়ে চুলে লাগাতে পারেন।

শীতে যেহেতু খুশকির সমস্যা বেড়ে যায় ,তাই মাথার ত্বকে এলোভেরা জেল লাগাতে পারেন এতে চুল পড়া কমে এবং খুশকি দূর হয়। Natural Hair Care In Winter.

 ৮.বাইরে যাওয়ার সময় 

শীতে  বাতাস থাকে শুষ্ক ও আর্দ্র।বায়ু দূষণের মাত্রা ও থাকে বেশি এবং ধুলাবালি পরিমাণে থাকে বেশি ।ভেজা চুল ও খোলা চুলে বাইরে না বেরোনোই ভালো বাইরে বেরোনোর সময় কাপড় বা ওড়না দিয়ে চুল ঢেকে রাখা ভালো এতে চুল দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে।


৯. স্টাইলিং এর যন্ত্র

শীতে এমনিতেই চুল রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায় তাই স্টাইলিং এর যন্ত্র (হেয়ার ড্রায়ার, স্টেটনার ,কাটিং টুল )এর ব্যবহার কম করার চেষ্টা করুন। চুলের সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে।

১০. চুলের যত্নে খাওয়া-দাওয়া

 বাইরে থেকে তো অনেক যত্ন হলো। এবার খাওয়া-দাওয়ার প্রসঙ্গে আসা যাক, শীতে প্রচুর রঙিন শাকসবজি ও ফলমূল পাওয়া যায়। এগুলো তে প্রচুর ভিটামিন এবং মিনারেলস থাকে। 

প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খান। প্রাকৃতিকভাবেই পুষ্টি যোগাবে এবং চুল থাকবে ঝলমলে উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত। আর প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।Cold Weather Hair care.

শীতে চুলের খুশকি দূর করার উপায়


এখন থেকেই চুলের বাড়তি একটু যত্ন নিন ,চুল থাকবে প্রানবন্ত ,উজ্জ্বল। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। ছোট বাচ্চাদের একটু খেয়াল রাখবেন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post