গর্ভবতী মহিলার যে বিষয় গুলো মেনে চলতে হবে।
গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদান একজন নারীর জীবনের পরিপূর্ণতা দান করে। জন্ম নেয় আরেকটি নতুন প্রাণ। শুধু গর্ভধারণ করে মা হওয়ার স্বপ্ন দেখলে চলবে না গর্ভধারণের জন্য প্রয়োজন প্রস্তুতি।Things that a pregnant woman has to follow.
প্রথম সন্তান হলে আরো বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কারণ গর্ভবতী নারীর কাছে এটি একদম নতুন অভিজ্ঞতা। মনে মনে অনেক অজানা ভয় কাজ করে ,তাই চারপাশের মানুষগুলোকে সাহায্য করতে হবে ভয় দূর করতে এবং মানসিকভাবে শক্ত থাকতে।বিশেষ করে স্বামীকে।
আপনি ”গর্ভধারণের পূর্ব প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন।” লেখাটি পড়তে পারেন।
গর্ভকালীন সময়ে একজন নারীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নেওয়া খুবই প্রয়োজন ।কিছু নিয়ম মেনে চললে সুস্থ গর্ভধারণ ও সুস্থ শিশু জন্মদানের সম্ভাবনা অনেক গুণে বেড়ে যায় ।
চলুন জেনে নেয়া যাক গর্ভবতী মায়ের যত্ন নেওয়া সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়--
গর্ভকালীন লক্ষণঃ
আপনি গর্ভবতী কিনা তা কিছু লক্ষণ দেখে সহজেই বুঝে নিতে পারবেন। সঠিক সময়ে নারীর গর্ভধারণ নিশ্চিত করতে পারলে তা মা ও শিশু দুজনের জন্যই ভালো। ঘরে বসেই কিছু লক্ষন দেখে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন আপনি গর্ভবতী কিনা ।What are the particular issues that affects maternal and child care?
লক্ষণগুলো হলো --
- মাসিক মিস হওয়ার ।
- বমি বমি ভাব হওয়া ।
- মন-মেজাজ ওঠানামা করা ।
- অবসন্ন বোধ হওয়া।
- খাবারে অনীহা ।
- ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া ।
- শরীরের তাপমাত্রা বর্ধিত হওয়া ।
- ঘুম থেকে উঠে সকালে অসুস্থ বোধ করা ।
সাধারণত মাসিক মিস হওয়ার এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে ।কারো কারো ক্ষেত্রে লক্ষণ ভিন্ন হতে পারে ।
ডাক্তারের পরামর্শঃ
উপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে আপনি বাড়িতে টেস্টিং কিট দিয়ে সহজেই পরীক্ষা করে নিতে পারেন। গর্ভধারণের পর পরই সঠিক পরামর্শের জন্য গাইনি ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। সঠিক সময়ে যত্ন নিলে এবং ডাক্তারের পরামর্শ মত চললে গর্ভবতী নারী ও তার গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যায়।
- ডাক্তারের কাছে আপনার সমস্যার কথা সঠিকভাবে বলুন প্রয়োজনে কাগজে লিখে নোট করে নিন যেন কোন কিছু বাদ না পড়ে ডাক্তারকে সব বিষয়ে সঠিক তথ্য দিন এতে আপনাকে সঠিক পরামর্শ দিতে ডাক্তারের সুবিধা হবে। Why is maternal and child health care important?
সুষম খাবারঃ
সন্তান পুষ্টি পায় তার মায়ের কাছ থেকেই। তাই গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত খাবার নয় বরং পরিমিত পরিমাণ এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। অতিরিক্ত খাবার খেলে মুটিয়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে । ফলে প্রসবকালীন জটিলতা ও মৃত শিশু জন্ম দেয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায় ।
প্রতিদিন পরিমাণমতো সুষম খাবার খেতে হবে। সিজনাল দেশীয় শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া সবচেয়ে ভালো। কারণ এগুলোতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ,মিনারেল এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। দামেও সস্তা ।
পর্যাপ্ত পানিঃ
গর্ভকালীন সময়ে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।পানি মায়ের শরীরে রক্ত তৈরিতে এবং রক্ত বাচ্চার শরীরে পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। পানির চাহিদা পূরণ করতে বিভিন্ন টাটকা ফলের রস, শরবত খাওয়া যেতে পারে ।
মানসিক স্বাস্থ্যেঃ
গর্ভবতী নারীর মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে। স্বামীকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করতে হবে স্ত্রীকে গর্ভকালীন সময়ে মানসিক চাপ, উদ্যোগ ও বিষণ্নতা মুক্ত রাখতে। গর্ভবতী নারীকে সব সময় হাসি খুশি ও আনন্দে থাকতে হবে, না হলে গর্ভের শিশুর উপর এর প্রভাব পড়বে এবং প্রসবকালীন জটিলতা দেখা দিতে পারে ।
নিয়মিত শরীর চর্চা করুনঃ
শরীরচর্চা শরীরের জন্য খুবই উপকারী। গর্ভকালীন সময়ে নিয়মিত শরীরচর্চা করলে গর্ভের শিশু এবং মা দুজনেই স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তবে শরীরচর্চা করার পূর্বে কোন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ মেনে পরিমিত পরিমাণ শরীরচর্চা করা ভালো। এতে করে গর্ভকালীন সময়ে একজন নারীর যে শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন গুলো আসে তার সাথে সহজেই মানিয়ে নিতে পারবে। মানসিক চাপ ও বিষণ্নতা ও কমবে । তবে শরীরচর্চা করার পূর্বে নিশ্চিত হতে হবে কোন গর্ভকালীন জটিলতা আছে কিনা।
পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামঃ
গর্ভবতী মহিলার সুস্বাস্থ্য ও সুস্থ শিশু জন্ম দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামে থাকা প্রয়োজন । দিনে দুই ঘন্টা ঘুম সহ দৈনিক দশ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন । দুপুরে ঘুমাতে না পারলে বিশ্রাম নিতে পারেন । পা ঝুলিয়ে বেশিক্ষণ বসে থাকবেন না ,এতে পা ফুলে যেতে পারে ।
নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিহারঃ
গর্ভকালীন সময়ে নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকতে হবে । নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবনের অভ্যাস থাকলে তা পরিত্যাগ করতে হবে । নেশাজাতীয় দ্রব্য পরিত্যাগ করা খুবই কঠিন একটি কাজ। তাই অবশ্যই পরিত্যাগ এর পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলেন । গর্ভকালীন সময়ে নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করলে অকাল গর্ভপাত, সময়ের আগে প্রসব ,প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম দেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় । কেউ ধূমপান করছে তার পাশে বসা কিংবা ওই রুমে থাকা থেকে বিরত থাকাই ভালো ।
ক্যাফেইন গ্রহণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণঃ
অনেকের অতিরিক্ত চা বা কফি গ্রহণ করে থাকে । চা বা কফিতে রয়েছে ক্যাফেইন , গর্ভবতী মায়ের গর্ভে শিশুর জন্য খুবই ক্ষতিকর । ক্যাফেইন শরীরকে আয়রন শোষণে বাধা দেয় । যা গর্ভাবস্থায় খুবই প্রয়োজন । অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে কম ওজনের শিশু জন্ম নেওয়া বা মিসক্যারেজের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে । এছাড়া ক্যাফেইন গ্রহণ করলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে ফলে মায়ের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে । চা-কফি, সোডা ,ব্ল্যাক-টি, গ্রিন-টি এবং ব্যাথার ঔষধ এর মধ্যেও ক্যাফেইন থাকে ।
ওজন বৃদ্ধির দিকে খেয়াল রাখুনঃ
গর্ভাবস্থায় মা ও শিশু উভয়েরই ওজন বৃদ্ধি পায় ।এটি সাধারণত দুই সপ্তাহের পর থেকে হয়ে থাকে । গর্ভবতী মায়ের ওজন বাড়ে কারণ গর্ভের শিশুর ওজন বাড়তে থাকে ।এই ওজন সাধারণত ১০ থেকে ১২.৫ কেজির মত হয় । প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে ।আবার প্রয়োজনের চেয়ে কম ওজন বাড়লেও তা বিপদের কারণ হতে পারে ।
দাঁতের যত্নঃ
ছোট-বড় সকলেই দাঁতের যত্ন প্রতি যত্নবান হওয়া খুবই জরুরী । তবে গর্ভকালীন সময়ে হরমোনাল পরিবর্তনের জন্য দাঁতের এবং দাঁতের মাড়ির সমস্যা হয়ে থাকে । তাই গর্ভাবস্থায় শুরু থেকে দাঁতের সঠিক যত্ন নিন । যেকোনো সমস্যায় ও ঔষধ সেবনের পূর্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।
দীর্ঘ ভ্রমণে সাবধানতাঃ
গর্ভাবস্থায় প্রথম ও শেষ তিন মাস কোন ধরনের দীর্ঘ ভ্রমণ থেকে বিরত থাকুন ।প্রয়োজনে ভ্রমণের পূর্বে সর্তকতা অবলম্বন করুন ।গর্ভাবস্থায় কোন কারণে ভ্রমণের প্রয়োজন হলে গর্ভকালীন কোন সমস্যা আছে কিনা নিশ্চিত করে তারপর ভ্রমণ করুন । নয়তো মা-ও-শিশুর সমস্যা হতে পারে ।
আপনি গর্ভবতী সেটি জানার সাথে সাথে নিজের সঠিক যত্ন নিন সুস্থ শিশুর জন্ম নিশ্চিত করুন ।একটি সুস্থ শিশু এনে দিতে পারে পরিবারে অনাবিল আনন্দ ।
পরিবারের সবার উচিত গর্ভবতী মায়ের সঠিক যত্ন নেওয়া , তাকে সব সময় হাসিখুশি রাখা এবং সঠিক দেখভাল করা ।objectives of maternal and child health.
সবাই ভাল থাকবেন ।সবার জন্য শুভকামনা ।