টমেটোর উপকারিতা কি?
টমেটো একটি দৃষ্টিনন্দন শীতের সবজি। তবে উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে এটি একটি ফল। আমাদের দেশে এটি শীতের সবজি হিসেবে কাঁচা ও পাকা এবং রান্না করে খাওয়া হয়। এটি একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজী। টমেটো শীতের সবজি হলেও আমাদের দেশে সারা বছরই পাওয়া যায়।
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি ।Tomato Health Benefits and Side Effects |
বিশেষজ্ঞরা কাঁচা টমেটো খাওয়ারই পরামর্শ দেন। এতে সর্বাধিক উপকার পাওয়া যায়। টমেটো পেকে লাল হওয়ার সাথে সাথে পুষ্টিগুণও বেড়ে যায়। টমেটো আমাদের শরীর ও ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। Health Benefits Of Tomato Bangla Tips.
টমেটোর পুষ্টি উপাদানঃ
টমেটোতে আছে থায়ামিন, নিয়াসিন, পাইরিডক্সিন ,ক্যারোটিন ,ভিটামিন সি,কে এ, ফলিক এসিড ও লাইকোপেন সহ নানা উপাদান। এছাড়াও টমেটোতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ,পটসিয়াম , কপার,ক্যালসিয়াম ,ফসফরাস ,ক্রোমিয়াম ও নিকোটিনের মতো খনিজ উপাদান ও এন্টি-অক্সিডেন্ট।
আমরা সাধারণত টমেটোর সালাদ, জুস করে, স্যুপ করে এবং রান্না করে খেয়ে থাকি।
চলুন জেনে নেয়া যাক টমেটো উপকারিতা -----
টমেটোর উপকারিতাঃ
চর্ম রোগ নিরাময়েঃ
চর্ম রোগ নিরাময়ের জন্য টমেটো অত্যন্ত কার্যকর।আপনার ত্বকে চর্মরোগ থাকলে টমেটোর রস নিয়মিত দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করলে চর্ম রোগ সেরে যায়।
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও বয়সের ছাপ দূর করতেঃ
ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে টমেটোর রস ব্যবহার করতে পারেন।এর রস ত্বককে মসৃণ, উজ্জ্বল ও কোমল করে। বয়সের ছাপ দূর করতে এটি বেশ কার্যকর।যাদের মুখে বয়সের ছাপ রয়েছে নিয়মিত টমেটোর রস ত্বকে ব্যবহার করলে তা দূর হবে।
উচ্চ রক্তচাপঃ
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে টমেটোর জুড়ি নেই। এতে রয়েছে পটাশিয়াম যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে ,শরীরের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ।এতে হার্ট ভালো থাকে ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
রক্তস্বল্পতা দূর করতেঃ
রক্তস্বল্পতা দূর করতে টমেটো বেশ কার্যকরী। যারা রক্তসল্পতায় ভুগছেন নিয়মিত মাঝারি আকারের দুইটি টমেটো খেলে রক্তস্বল্পতা দূর হবে ।গর্ভবতী মহিলারা সাধারণত রক্ত স্বল্পতায় ভোগে ।তই গর্ভ কালিন সময়ে মা ও শিশুর রক্ত স্বল্পতা দূর করতে নিয়মিত টমেটো খাওয়া জরুরি।
সর্দি কাশি নিরাময়ঃ
সর্দি-কাশি সারা বছরের যেকোনো বয়সেই হতে পারে ।তবে শীতকালে সর্দি-কাশির প্রকোপ বেশি দেখা যায় ।তা থেকে মুক্তি পেতে টমেটোর গরম স্যুপ খেতে পারেন এতে উপকার পাবেন।
জ্বর নিরাময়েঃ
সামান্য জ্বর জ্বর ভাব হলে টমেটো খেলে আরাম পাবেন ।তবে মনে রাখবেন জ্বর বেশি হলে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হবেন।
মাড়ি থেকে রক্ত পড়া ও ক্ষত নিরাময়েঃ
ভিটামিন সি এর অভাবে মাড়ি থেকে রক্তপাত হয় ও ক্ষত সৃষ্টি হয় ।টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন সি যা মাড়ির রক্তপাতও ক্ষত নিরাময়ে কার্যকরী ।তাই প্রতিদিন কাঁচা টমেটো কাচাঁ টমেটো খান মাড়ির সমস্যা থেকে সুস্থ থাকুন ।
অ্যাজমা নিরাময়েঃ
লাইকোপেন ও ভিটামিন ই অ্যাজমা নিরাময়ে সাহায্য করে যা টমেটোতে বিদ্যামান ।তাই যাদের অ্যাজমা রয়েছে তারা নিয়মিত টমেটো খেলে অ্যাজমা রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকবে ।
দাঁত ও হাড়কে শক্ত করেঃ
টমেটোতে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন কে থাকে যা দাঁত ও হাড়কে শক্ত ও মজবুত করে ।ফলে দাঁত ও হাড়ের সমস্যা ও বাতের ব্যথা নিরাময় করে ।যাদের হাড় দুর্বল তারা নিয়মিত টমেটো খান ।টমেটো টিস্যুর পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ।
ক্যান্সার প্রতিরোধেঃ
টমেটোতে রয়েছে উচ্চ মানের লাইকোপেন ও এন্টি-অক্সিডেন্ট যা প্রোস্টেট ,কোলন,স্তন,ও পাকস্থলীর ক্যান্সার সেল তৈরি হতে বাধা দেয় ।ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধ হয় ।
চোখের যত্নেঃ
টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন এ যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে ।রাতকানা রোগ সারাতে টমেটো খুবই কার্যকরী ঔষধ ।চোখের ছানিও প্রতিরোধ করে ।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণেঃ
টমেটোতে থাকা বিটা ক্যারোটিন ও লাইকোপেন আমাদের দেহ থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে এর ফলে মানসিক চাপ কমে ।
মূত্রাশয় সংক্রমণ ও পাথরঃ
টমেটো মূত্রাশয়ের অম্লতা কে নিরপেক্ষ রাখতে সাহায্য করে ।তার ফলে মূত্রসংক্রমণ ও পাথর তৈরি হতে বাধা দেয় ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ
টমেটোতে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল আমাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ।যারা সবসময় রোগা বা দুর্বল থাকেন তারা নিয়মিত টমেটো সালাদ খেতে পারেন ।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ
টমেটোতে খুব সামান্য পরিমাণ শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট রয়েছে ।ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কম পরিমাণে শর্করা গ্রহণ করা প্রয়োজন ।তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিশ্চিন্তে খাদ্যতালিকায় টমেটো রাখতে পারেন।
সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক বা দুটি টমেটো খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। টমেটো এক বা দুইবার খেলে রক্তস্বল্পতা অনেকটাই নিরাময় করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
- শক্তি বৃদ্ধি করে
- রক্ত ক্ষয় রোধ করে
- হজমশক্তি উন্নত করে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে
- শিশুদের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করে
- ভ্রূণের স্বাস্থ্যকর বিকাশ সাহায্য করে
- হার্ট সুস্থ রাখে
- রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে
- ইউটিআই প্রতিরোধ করে
- গর্ভকালীন ডায়াবেটিস পরিচালনা করতে সহায়তা করে
- ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
টমেটো খাওয়ার সতর্কতাঃ
টমেটো অত্যান্ত উপকারী সবজি তবে টমেটো খাওয়ার আগে কিছু দিক খেয়াল রাখতে হবে নয়তো লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে।
চলুন জেনে নেই --
- টমেটো আপনার অ্যালার্জি থাকলে টমেটো খাওয়া বা ত্বকে ব্যবহার এড়িয়ে চলুন।
- টমেটো অতিরিক্ত খেলে গ্যাসের সমস্যা ও পেট ব্যথা হতে পারে।এর ফলে বুকে জ্বালা ভাব হতে পারে ।
- তরতাজা ও কাঁচা টমেটো খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।টমেটো সস বা পাস্তুরিত টমেটোতে প্রচুর সোডিয়াম থাকে যা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে ।
- টমেটো বেশি খেলে কুষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
সবশেষে বলবো যে, যে কোন খাবারই প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রহন করলে ক্ষতিই বেশি হয়।স্বাস্থ্যও ঝুকিপূর্ণ হতে পারে ।তাই যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই খাদ্য তালিকায় রাখুন।তাজা শাকসবজী ও ফলমুল খান এতেই মিলবে সুস্থ ও সুন্দর জীবন।
সবাই ভালো থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন ।
অল্লাহ হাফেজ ।