তুলসী কি ? ব্যবহার , স্বাস্থ্যসুবিধা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া Tulsi Uses ,Health Benefits and Side Effects

তুলসীর ব্যাবহার ,উপকারীতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া 

Uses, Health Benefits, and Side Effects Of Tulsi Bangla.

তুলসী কি ? ব্যবহার , স্বাস্থ্যসুবিধা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া Tulsi Uses ,Health Benefits and Side Effects
তুলসী পাতার ছবি

তুলসী কী?

একটি ঔষধি গাছ তুলসী। যার অর্থ তুলনা নেই।তুলসী গাছ  লামিয়াসি পরিবারের অন্তর্গত একটি সুগন্ধি উদ্ভিদ । হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি পবিত্র উদ্ভিদ হিসেবে সমাদৃত। তুলসী একটি ঘন শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট ,দুই থেকে তিন ফুট উঁচু চিরহরিৎ।  এর কান্ড কাষ্ঠল ,পাতা  ২ থেকে  ৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। পাতার কিনারা খাঁজকাটা , শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগ হতে পাঁচটি পুষ্পদন্ড বের হয়। এর পাতা ও  ফুলের একটি ঝাঁঝালো গন্ধ আছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় সর্বত্র দেখা যায়। হিন্দুর বাড়িতে বেশি দেখা যায়। পূজায় ব্যবহার হয়। ভারতে বাণিজ্যিকভাবে তুলসী চাষ হয়। জুলাই-আগস্ট বা নভেম্বর-ডিসেম্বর  এতে মন্জুরী  দেখা যায়।     

সমতল ভূমি থেকে শুরু করে হিমালয়ের পাদদেশে প্রায় ছয় হাজার ফুট উচ্চতা পর্যন্ত এদের জন্মাতে দেখা যায়।

তুলসী পাতার বিজ্ঞানসম্মত নাম

তুলসী ইংরেজি: holy basil, বা tulasī 
বৈজ্ঞানিক নাম: Ocimum Sanctum 

ব্যবহারঃ

তুলসী গাছের নানা ঔষধি ব্যবহার রয়েছে।  সর্দি, কাশি, ঠান্ডা লাগা ইত্যাদি নানা সমস্যায় তুলসী ব্যবহার করা হয়  ।এই গাছের রস কৃমিনাশক ঔষধ হিসেবে  ব্এযাবহৃত হয় । এই গাছের ব্যবহার অংশগুলো হলো  রস, পাতা এবং বীজ  । বাংলাদেশের যে চার প্রকার তুলসী গাছ দেখা যায় সেগুলো হলো বাবুই , রাম ,কৃষ্ণ , শ্বেত । ,        

তুলসী পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতাঃ

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ

তুলসীতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি' এবং  জিংক । রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সংক্রমণ   রোগ উপশম করে  ।এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে  অ্যান্টি -ব্যাকটেরিয়াল,এন্টি-ভাইরাল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান ।যা বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে আমাদের সুরক্ষা দেয় ।

জ্বর এবং ব্যথা কমায়ঃ

তুলসীতে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান সংক্রমনের বিরুদ্ধে কার্যকর ভূমিকা পালন করে ।এটি জ্বর কমাতে ও শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে  ।তাই জ্বর কমাতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে তুলসী পাতা ব্যবহার করতে পারেন ।

ঠান্ডা ,কাশি এবং অন্যান্য শ্বাসযন্ত্রের রোগ কমাতে সাহায্য করেঃ

তুলসী তে রয়েছে  ক্যামফিন ,সিনোল এবং ইউজেনল যা ঠান্ডা জনিত কাশি এবং সর্দি কমাতে সাহায্য করে । বায়ু দূষণ জনিত শ্বাসযন্ত্রের ক্রিয়ায় ও এটি কার্যকরী । তুলসী  পাতার রসের সঙ্গে আদা ও মধু মিশিয়ে খেলে ব্রঙ্কাইটিস ,হাঁপানি ,ইনফ্লয়েন্জা , সর্দিতে ভাল কাজ করে এবং আরাম পাওয়া যায় ।

মানসিক চাপ এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতেঃ 

মানসিক চাপ এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে তুলসী পাতার রস কার্যকরী ।  অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এসেন্সিয়াল অয়েল মানসিক চাপ এবং অবসাদ কমায় ।

ক্যান্সার বিরোধী বৈশিষ্ট্যঃ

তুলছি তা রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান ।তুলসী  ত্বক ,লিভার , ওরাল এবং ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে আমাদের রক্ষা পেতে সহায়তা করে ।

হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ

তুলসী রক্তের লিপিড কনটেন্ট  হ্রাস  করে , রক্তস্বল্পতা রোধ করে ,উচ্চ রক্তচাপ  কমায় , খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে নানাবিধ হৃদরোগের হাত থেকে রক্ষা করে ।

ডায়াবেটিস রোগেঃ

তুলসী পাতার রস নিয়মিত খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস পায় ,ফলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।

কিডনিতে পাথর এবং বাতের ব্যথায়ঃ 

তুলসী শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে এবং মুত্র বর্ধন করে ।ফলে দেহে ইউরিক এসিডের মাত্রা হ্রাস পায় এবং কিডনিতে পাথর হয় না ।পাথর থাকলে তা ক্ষয় হয়ে বের হয়ে যায় ।ইউরিক এসিডের মাত্রা হ্রাস পাওয়ার ফলে  গেঁটেবাত আক্রান্ত রোগীদের আরাম দেয় ।

পরিপাকতন্ত্র জনিত রোগঃ

তুলসীপাতা পেট ফাঁপা এবং পেটের ফোলা ভাব দূর করতে  সাহায্য করে ।বদহজম এবং ক্ষুধা হ্রাস করতেও সহায়তা করে ।

ত্বক ও চুলের জন্যঃ

তুলসী ত্বকের কালো দাগ এবং ব্রণের দাগ পরিষ্কার করে ।এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ বয়সের দাগ রোধ করতেও সাহায্য করে । এটি চুলের গোড়া কে শক্তিশালী করে ফলে চুল পড়া কমে  । এন্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য ত্বকে ছত্রাক এবং  মাথার ত্বকে  খুশকি বিকাশে বাধা দেয় ।benefits of tulsi for skin.

পোকা প্রতিরোধক হিসেবেঃ

ঘরোয়া পদ্ধতিতে, বহু শতাব্দী ধরে , সংরক্ষন করা শস্যের সাথে মিশ্রিত করে পোকামাকড় ঠেকাতে শুকনো তুলসীপাতা ব্যবহৃত হয়ে আসছে ।

পোকার কামড় এবং ক্ষতের চিকিৎসাঃ

শরীরের কোথাও কেটে  বা পুড়ে গেলে কিংবা  পোকা কামড়ালে  তুলসী পাতার পেস্ট লাগালে খুব সহজে সেরে যায়। এটি সংক্রমণও রোধ করে।

তুলসী পাতার পার্শপ্রতিক্রিয়াঃ 

তুলসী পাতার উপকারিতার প্শাপাশি কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি ও রয়েছে। চলুন তুলসী গ্রহণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নেইঃ

What are the side effects of Tulsi?

  • গর্ভধারণের চেষ্টা করা মহিলাদের প্রজনন  ক্ষমতায় তুলসী প্রভাব ফেলতে পারে। তাই এই সময়ে এবং গর্ভাবস্থায় এটি ব্যবহার না করাই ভালো।
  • তুলসী পাতার চা ব্যবহার করা শুরু করার দিকে বমি বমি ভাব বা ডায়রিয়া আক্রান্ত হতে পারে, তাই অল্প পরিমাণে শুরু করে অভ্যস্ত হয়ে গেলে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।
  • তুলসী রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস করে তাই যাদের ডায়াবেটিস আছে এবং রক্তের চিনির  হ্রাস করার ঔষধ ব্যবহার করেন তাদের সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত।
  • অতিরিক্ত তুলসীর রস গ্রহণের ফলে লিভারের ক্ষতি হতে পারে।
  •  প্রতিদিন পাঁচ থেকে সাতটি তুলসী পাতার রস গ্রহণ করা ভালো।
  • তুলসী পাতা চিবিয়ে খেলে তা দাঁতের ক্ষতি করতে পারে।


তুলসী গাছ টবে অতি অল্প জায়গায়ই জন্মানো যায় ।বাড়ির বারান্দায় বা ছাদে সহজেই  তুলসী জন্মানো য়ায।তাই খুব সহজেই আপনি একটি তুলসী গাছ লাগাতে পারেন। এই গাছ থাকলে মশা মাছিও বাড়িস থেকে দূরে থাকে।

সবাই ভালো থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন। কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।








Post a Comment (0)
Previous Post Next Post