শীতকালে বাঁধাকপি কেন খাবেন?
বাঁধাকপি খাওয়ার উপকারিতা Cabbage Health Benefits and Side Effects |
একটু একটু করে শীত এসে গেছে ।এখন বাজারে শীতের সবজি পাওয়া যাচ্ছে ।এই সময় বাঁধাকপি (বাধা কপি) পাওয়া যায় বাজারে। বাঁধাকপি শরীরের জন্য খুবই উপকারী ।প্রাচীন কাল থেকেই বহু রোগের চিকিৎসায় গ্রিক ও মিশরীয়রা বাধাঁকপির রস কাজে লাগাতো ।Cabbage Benefits.
বাঁধাকপি English Meaning
- বাঁধাকপি Meaning In English Cabbage
বাঁধাকপির প্রকারভেদ | Types of Cabbages
বাঁধাকপির চার প্রকার:
- সবুজ বাধাকপি
- লাল বা বেগুনি বাঁধাকপি
- ব্রাসেলস স্প্রাউটস
- নাপা বাঁধাকপি
বাঁধাকপির পুষ্টিগুণ(Nutritional value of cabbage):
চলুন জেনে নেয়া যাক বাঁধাকপির পুষ্টিগুণঃ
বাঁধাকপি বা পাতাকপি শীতকালীন পাতাজাতীয় এক ধরনের সবজি। আমরা সাধারণত বাঁধাকপি ভাজি আকারে খেয়ে থাকি। আমাদের দেশে পাতাকপি ভাজি খুবই জনপ্রিয় এছাড়াও পাতাকপি দিয়ে রান্না করা তরকারি,সবজি বা সালাদ আকারে পাতাকপি খেয়ে থাকি।
বাংলাদেশে আমরা সাধারণত সবুজ বাঁধাকপি দেখে থাকি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে সবুজ ছাড়াও লাল ,সাদা, সবুজ, হালকা সবুজ, বেগুনি রঙ্গের বাঁধাকপিও পাওয়া যায়। বাঁধাকপি পুষ্টিগুণে ভরপুর একটি সবজি।How many varieties of cabbage are there?
পুষ্টি উপাদান | Nutrition facts
পুষ্টিবিদদের মতে প্রতি ১০০ গ্রাম বাঁধাকপিতে রয়েছে ---
- খাদ্যশক্তি- ২৫ কিলো ক্যালরি
- শর্করা- ৫.৮ গ্রাম
- চিনি -৩.২ গ্রাম
- খাদ্যআঁশ-২.৫ গ্রাম
- চর্বি- ০.১ গ্রাম
- আমিষ-১.২৮ গ্রাম
- থায়ামিন-০.৬৬১ মিলিগ্রাম
- রিবোফ্লেভিন-০.০৪ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন-০.২৩৪ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি৬-০.১২৪ মিলিগ্রাম
- প্যানটোথেনিক অ্যাসিড-০.২১২ মিলিগ্রাম
- ম্যাগনেসিয়াম-১২ মিলিগ্রাম
- ম্যাঙ্গানিজ-০.১৬ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস-১৮ মিলিগ্রাম
- জিংক-০.১৮ মিলিগ্রাম
- ফ্লোরাইড-১আই ইউ
বাঁধাকপি স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া Cabbage health benefits and side effects
পুষ্টিগুণের পাশাপাশি বাঁধাকপিতে রয়েছে নানান রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা।
ওজন কমাতে বাধাঁকপি
বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ বা ফাইবার যা কোন ক্যালরি ছাড়াই পেট ভরাতে সাহায্য করে ।এর ফলে শরীরে জমে থাকা বাড়তি মেদ ঝড়িয়ে ফেলে । যদি ওজন কমাতে চান তবে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় বাঁধাকপি রাখুন। বাঁধাকপিতে রয়েছে খুবই সামান্য পরিমাণে কোলেস্টেরল ও চর্বি যা ওজন কমাতে সাহায্য করে ।
হাড় ভালো রাখতে বাধাঁকপি
বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম,পটসিয়াম, ফসফরাস ও সোডিয়াম রয়েছে।এ সবকটি উপাদান হাড়ের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে কাজে আসে। এছাড়াও বাঁধাকপিতে উপস্থিত ভিটামিন হাড়কে মজবুত রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিয়মিত বাঁধাকপি খেলে বার্ধক্যজনিত হাড়ের সমস্যার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায় ।
ক্যান্সার প্রতিরোধে বাধাঁকপি
বাধাঁকপিতে উপস্থিত ফোটোনিউট্রিয়েন্ট শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদানের মাত্রাবাড়িয়ে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার বৃদ্ধি রোধ করে। বাধাঁকপিতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরকে ক্যান্সার মুক্ত রাখতে সাহায্য করে ।
আলসার নিরাময়ে বাধাঁকপি
বাধাঁকপি আলসার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, বাঁধাকপির রস আলসারের জন্য উপকারী প্রাকৃতিক ওষুধ।বাধাঁকপির রস নিয়মিত খেলে আলসার ভালো হয় ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বাধাঁকপি
বাধাঁকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন বি৬,কে, সি এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহে র রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, নিয়মিত বাঁধাকপি খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে থাকে ।
কিডনি সমস্যা প্রতিরোধে বাধাঁকপি
কিডনির সমস্যা প্রতিরোধে বাধাঁকপি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে । কিডনির সমস্যায় কাঁচা বাধাঁকপি খাওয়া উত্তম।
হজমে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বাধাঁকপি
বাধাঁকপিতে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার বা আঁশ থাকায় এটি হজম প্রক্রিয়াকে সহজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া বাধাঁকপি বুক জ্বালা-পোড়া, পেট ফাঁপা সহ ,পেটের একাধিক সমস্যা দূর করে।
চোখ ,চুল ও ত্বকের যত্নে বাধাঁকপি
বাধাঁকপি বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ একটি সবজি হওয়ায় এটি চোখের সুরক্ষায় অত্যন্ত কার্যকরী। বাধাঁকপি ফাইটোকেমিক্যালসের অন্যতম উৎস হওয়ায় শরীর ও ত্বকের কোষকে প্রদাহের হাত থেকে রক্ষা করে।
উজ্জ্বল ,ঝলমলে চুলের জন্য বাধাঁকপির জুড়ি নেই । বাধাঁকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন যা চুল পরা রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
উজ্জ্বল ,ঝলমলে চুলের জন্য বাধাঁকপির জুড়ি নেই । বাধাঁকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমান ভিটামিন যা চুল পরা রোধ করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
টক্সিন দূর করতে বাধাঁকপি
বাধাঁকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার। যা ডি-টক্সিফিকেশন এনজাইমের এর মাধ্যমে লিভারকে সুরক্ষা প্রদান করে।বহু প্রাচীন কাল থেকে শরীরের টক্সিন দূর করতে বাধাঁকপি খাওয়া হয়।শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেও এর জুড়ি নেই ।
আইরনের উৎস হিসেবে বাধাঁকপি
বাধাঁকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আয়রন । শরীরের প্রয়োজনীয় আয়রনের চাহিদা এই বাধাঁকপি থেকেই পাওয়া যায়। আয়রনের অভাবে শরীরে রক্তস্বল্পতা, ক্লান্তি ও মস্তিষ্কের সমস্যা হয়ে থাকে ।
গর্ভাবস্থায় বাঁধাকপি
একজন গর্ভবতী নারীর জন্য একটি সঠিক ডায়েট গ্রহণ করা জরুরি । হবু মায়ের জন্য এবং তার গর্ভের শিশুর জন্য সবুজ শাক-সবজি খুবই প্রয়োজন ।সবুজ সবজির মধ্যে বাঁধাকপি অন্যতম । এটি বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলস এ ভরপুর ।
গর্ভবতী অবস্থায় বাঁধাকপি খাওয়া স্বাস্থ্যকর উপকারিতাঃ
- বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দেখা দেয় ।বাঁধাকপিতে প্রচুর ফাইবার থাকার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে ।
- বাঁধাকপিতে থাকা ফলিক এসিড ভ্রূণের নিউরাল টিউব সংক্রান্ত জন্মের ত্রুটি থেকে নিরাপদ রাখে ।
- এর ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন কে মায়ের এবং গর্ভের বাচ্চার হার্টে শক্তিশালী করে তোলে ।
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি' রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে ।
- বাঁধাকপি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে । তাই গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস করে গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে অ্যানিমিয়া এবং রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি দেখা দেয় ।এই ঝুঁকি দূর করে বাঁধাকপিতে থাকা আয়রন ।
- গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে শরীরের নির্দিষ্ট কিছু অংশ ফুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায় ।ফোলা জায়গায় বাঁধাকপির পাতা লাগিয়ে রাখলে ফোলভাব কমে ।
সর্তকতাঃ
- বাঁধাকপি কাঁচা সালাদে কিংবা জুস বানানোর সময় ভালোভাবে ধুয়ে নিন ।
- থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা থাকলে অল্প মাত্রায় বাঁধাকপি গ্রহণ করা উচিত ।
- বাঁধাকপি কেনার সময় তাজা এবং দাগমুক্ত কিনা দেখে কিনুন ।
- বাঁধাকপিতে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হয় তাই ভালোভাবে ধুয়ে সিদ্ধ করে খাওয়াই ভালো ।গর্ভাবস্থায় কাঁচা বাঁধাকপি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন । এটি ব্যাকটেরিয়া যুক্ত হতে পারে, যা খাদ্যে বিষক্রিয়ার ঘটাতে পারে । এর ফলে গর্ভপাত , মৃত শিশু প্রসব এবং অকাল প্রসব হতে পারে ।Cooked cabbage nutrition.
- পাতাকপিতে কৃমি উপস্থিত থাকতে পারে।এগুলো এত ছোট আকারের যা খালি চোখে দেখা যায় না ।এই কৃমি গুলো খাবারের সাথে পেটে গেলে এরা মস্তিষ্ক ও চোখে গিয়ে বসবাস শুরু করে এবং বংশবৃদ্ধি করে ।কৃমি ৩০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে । ভালোভাবে ধুয়ে সিদ্ধ করলে তাপমাত্রায় মারা যায় ।তাই এই ধরনের কৃমির বিস্তাররোধে কাঁচা বাঁধাকপি এড়িয়ে চলাই ভালো ।Boiled cabbage nutrition.
- অতিরিক্ত মাত্রায় বাঁধাকপি খেলে পেট ফাঁপা এবং গ্যাসের সমস্যা হতে পারে ।তাই অতিরিক্ত বাঁধাকপি না খেয়ে পরিমিত পরিমাণ খাওয়াই ভালো।Cabbage side effects.
কোন খাবার অতিরিক্ত এবং অনিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খেলে উপকার এর তুলনায় অপকারই বেশি হয়ে থাকে ।তাই পরিমিত পরিমাণ বাঁধাকপি খাদ্যতালিকায় রাখুন ।সুস্থ থাকুন