মধু কি? ব্যবহার, স্বাস্থ্য সুবিধা ও পার্শপ্রতিক্রিয়া।What is Honey? Uses, Health Benefits and Side Effects

মধু : গুণাগুণ ও উপকারিতা

মধু কী?(What is Honey?)

মধু হলো এক প্রকারের ঘন ও মিষ্টি  স্বাদ যুক্ত তরল পদার্থ ,যা মৌমাছিরা ফুলের নির্যাস থেকে তৈরি করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে  ।এটি একটি উচ্চ ঔষধি গুণসম্পন্ন  সুপেয় ভেষজ তরল।

মৌমাছিরা ফুলের রেণু ও মিষ্টি রস সংগ্রহ করে পাকস্থলিতে জমা রাখে। তারপর মৌমাছির মুখ নিঃসৃত লালার সাথে মিশ্রিত হয়ে জটিল রাসায়নিক বিক্রিয়ায় মধু তৈরি করে। সেই মধু মুখ হতে মৌমাছিরা মৌচাকের প্রকোষ্ঠে জমা করে।


মধু কি? ব্যবহার, স্বাস্থ্যসুবিধা ও পার্শপ্রতিক্রিয়া।What is Honey? Uses ,Health Benefits and Side Effects

পবিত্র কোরআনে ”নাহল ”নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা বিদ্যমান রয়েছে ।আরবি ভাষার শব্দ "নাহল" বাংলা ভাষায় মৌমাছি বা মধুপোকা  ।মধু খোদায়ী চিকিৎসা ও নবী করীম (সা.)-এর বিধান এর অন্তর্ভুক্ত। সূরা মুহাম্মদ -এর ১৫ নং আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন -”জান্নাতে  স্বচ্ছ মধুর নহর প্রবাহিত হবে ”।

আপনি ”ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে মধুর ব্যবহার লেখাটি পড়তে পারেন।

 মধুর পুষ্টিগুণঃ

মধুতে ৪৫ টিরও বেশি খাদ্য উপাদান রয়েছে । মধুতে রয়েছে ভিটামিন বি১ , বি২ , বি৩ , বি৫ , বি৬  ,আয়োডিন , কপার ও জিংক  সহ অ্যান্টি - ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি - মাইক্রোবিয়াল উপাদান , যা আমাদের দেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সুরক্ষায় কাজ করে। আরো রয়েছে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ , সুক্রোজ , মলটোজ ,অ্যামাইনো এসিড ,খনিজ লবণ ও এনজাইম ,ক্যালরি ।

মধুর ব্যবহার 

মধুতে রয়েছে সুগার (গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজ ) ভিটামিন এনজাইম , খনিজ পদার্থ , প্রোটিন। ৯৯ প্রকার রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে মধু ।

 চলুন জেনে নেওয়া যাক মধুর কিছু ব্যবহার  সম্পর্কে ---

 ত্বকের সৌন্দর্য  বৃদ্ধিতেঃ

 নানা কারনে আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট হয় । যেমন দূষণ ,অতিরিক্ত ক্যামিকেল জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার , শীতের শুষ্ক রুক্ষ আবহাওয়া । ত্বকের সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে এবং ত্বককে সুন্দর রাখতে মধু কার্যকরী ভূমিকা পালন করে । চলুন জেনে নেয়া যাক ত্বকে মধুর কিছু ব্যবহার সম্পর্কে---- 

  • শুষ্ক ত্বকের রুক্ষতা দূর করে মধু ত্বককে নরম উজ্জ্বল করে তোলে।
  • ত্বকের ব্রুণ দূর করতে মধুতে থাকা ব্যাকটেরিয়া বিরোধী উপাদান  সাহায্য করে এবং ত্বকের কালো দাগ দূর করে ।
  •  লোমকূপের ছিদ্রগুলো বড় থাকলে  প্রতিদিন মধু ব্যবহার করলে ত্বকের সমস্যা আর থাকে না ।
  • মধুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট । নিয়মিত ত্বকে মধু ব্যবহার করলে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না ।ত্বকে যদি বয়সের ছাপ পড়ে সেটি দূর করতেও মধু কার্যকর ভূমিকা পালন করে ।

 চুলের যত্নে মধুর ব্যবহারঃ

 ত্বকের যত্নের পাশাপাশি চুলের যত্ন ও মধু অতুলনীয় । বাইরের ধুলোবালি , দূষণ , সূর্যের তাপ ,স্টাইলিং এর যন্ত্র ব্যবহার (হেয়ার ড্রায়ার ,হেয়ার স্ট্রেটনিং , কার্লিং এর যন্ত্র ) আরও নানা কারণে চুল হয়ে  পড়তে পারে শুষ্ক ,রুক্ষ । এর ফলে চুল হয়ে পড়ে নিষ্প্রাণ । মধুতে রয়েছে প্রকৃতি প্রদত্ত অসংখ্য গুণাবলী । চলুন জেনে নেয়া যাক চুলের যত্নে মধুর ব্যবহার সম্পর্কে --

  • মধুতে রয়েছে চুলে আদ্রতা ধরে রাখার ক্ষমতা ।এর ফলে চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করতে সাহায্য করে এবং   চুল সুস্থ ও মজবুত করে ।
  • মধু চুলের গ্রন্থি খুব শক্তিশালী করে  চুল উঠে যাওয়া  রোধ করে  ,ফলে চুল ঘন ও লম্বা হয় ।
  • মধুতে থাকা  এনজাইম চুলকে প্রাকৃতিক ভাবে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে  । চুলে নিয়মিত মধু ব্যবহার করলে চুল উজ্জ্বল হয় ও চাকচিক্য বাড়ে ।
  • এটি মাথায় কোন স্ক্যাল্প ইনফেকশন থাকলে তা প্রতিরোধ করতে এবং চর্মরোগ , সিরোসিসের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে ।
  • গ্রন্থি কোষগুলো পরিষ্কার রাখতে মধু কার্যকরী ভূমিকা পালন করে এর ফলে চুলের বৃদ্ধি জোরদার হয় এবং  সুপ্ত গ্রন্থি কোষ  বৃদ্ধির জন্যও  কার্যকরী ।

 বিভিন্ন রোগে মধুর ব্যবহারঃ 

মধু প্রায় ৯৯ টি রোগ নিরাময় প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে  ।মধু কখনো এককভাবে আবার কখনো ভেষজ  উদ্ভিদের সাথে  মিশ্রিত করে রোগ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসায় সফলতার সঙ্গে ব্যবহার করে আসছে বহু বছর ধরে ।

 নিচে রোগ নিরাময়ে মধুর ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো--- 

১.ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে 

ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময়ে মধু খুবই উপকারী তাই নিয়মিত মধু খাওয়া উচিত ।

২.কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ

মধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে । কুসুম গরম পানির সঙ্গে ৩ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় ।মধু খাবার হজমেও সাহায্য করে ।

৩.অনিদ্রায়ঃ 

ঘুম ঠিকমতো নাহলে নিয়মিত রাতে ঘুমানোর আগে মধু খেলে অনিদ্রা সমস্যা দূর  করে  এবং ভালো ঘুম হয় ।

৪.যৌন দুর্বলতায়ঃ

প্রতিদিন মধু খেলে যৌন দুর্বলতা দূর হয় । তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মধু ও ছোলা মিশিয়ে খেলে উপকার পাবেন ।

৫.মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায়ঃ

মধুতে রয়েছে এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান তাই মধু মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য রক্ষায় ভূমিকা রাখে । মধু দাঁতের ক্ষয় রোধ করে, পাথর জমতে বাধা দেয় ,দাঁত পড়ে যাওয়া আটকাতে সাহায্য করে এবং দাঁতের মাড়ি স্বাস্থ্য রক্ষা করে ।

৬.শক্তি প্রদান করেঃ

মধুতে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি রয়েছে । তাই চিনি শরীরে শক্তি যোগায় এবং শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে ভূমিকা রাখে , শরীরের দুর্বলতা দূর করতে এবং শরীরকে  সারাদিন কর্মক্ষম রাখতে নিয়মিত সকালে এক চামচ মধু খেতে পারেন ।

৭.পানিশূন্যতায়ঃ

মধ্যে থাকা জলীয় উপাদান শরীরে পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে .শরীরের পানির অভাব পূরণ করে ।

৮.দৃষ্টিশক্তি বাড়াতেঃ

মধু চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে এবং কিছু চোখের রোগে মধু ব্যবহারে সেরে যায় ।

৯.ওজন কমাতেঃ

নিয়মিত বিশুদ্ধ, খাঁটি মধু খেলে ওজন কমাতে পারবেন । চিনির পরিবর্তে চা ,কফি বা অন্যান্য মিষ্টি জাতীয় খাবারের পরিবর্তে  মধু খেতে পারেন  ।মধু মেদ ঝরতে ও কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে  ।নিয়মিত মধু খেলে পাকস্থলী তে  বাড়তি গ্লুকোজ তৈরি হয় , ফলে মস্তিষ্কের সুগার লেভেল বেড়ে গিয়ে মেদ কমানোর হরমোন নিঃসরণ এর জন্য চাপ সৃষ্টি করে , এর ফলে মেদ কমানোর সুযোগ তৈরি হয় ।

১০.তারুণ্য বজায় রাখেঃ

মধুতে রয়েছে প্রচুর এন্টি-অক্সিডেন্ট । এটি ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে , প্রয়োজনীয় বলিরেখা দূর করতে এবং ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে ।তাই তারুণ্য বজায় রাখতে চাইলে মধুর ব্যবহার অতি প্রয়োজন ।

১১. শরীরের ব্যথায়ঃ

শরীরের ব্যথা হওয়ার কারণ হচ্ছে শরীরের অবাঞ্চিত রস ।এই রস অপসারিত করতে এবং শরীরের গাটে বা বাতের ব্যথা দূর করতে সাহায্য করে মধু ।

১২.কাটাছেঁড়া এবং ক্ষত নিরাময়েঃ

কোথাও কেটে গেলে বা পুড়ে গেলে মলম এর চেয়ে মধু ব্যবহার করলে দ্রুত সেরে যায়  । মধুতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকাতে ক্ষত বা পোড়া স্থানে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায় ।

১৩.হৃদরোগে মধুঃ 

মধু রক্তনালী পরিষ্কার করতে এবং রক্তনালীর বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে । ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়  ।মধু হৃদপেশী কে সুস্থ সবল এবং কার্যকর রাখতে  সাহায্য করে ।

১৪.ডায়রিয়া আমাশয় ও পেটের পীড়া নিরাময়েঃ 

মধু ডায়রিয়া আমাশয় ও পেটের পীড়া নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে । যারা অনেকদিন যাবত আমাশয় ও পেটের পীড়ায় আক্রান্ত তারা কচি বেল গাছের বাকল ও মধু মিশিয়ে খেলে ভালো হবে ।

মধুর পার্শপ্রতিক্রিয়া (Side Effects):

  • মধু কখনো গরম করে খাওয়া যাবে না তাতে উপকার না হয়ে  ক্ষতি হবে । আপনার ক্যান্সারের কারণও হতে পারে।

  • গরম দুধ বা পানিতে মধু মিশিয়ে খাওয়া যাবেনা  ।হালকা কুসুম গরম  দুধ বা  পানিতে মধু মিশিয়ে খেতে হবে ।
  • আপনার যদি ডায়াবেটিস থাকে তবে অল্প পরিমাণ মধু গ্রহণ করা উচিত ।
  • একজন সুস্থ ব্যক্তির দিনে ৩ টেবিল চামচ মধু খেতে পারে । তবে মধু  বেশি খেতে চাইলে আপনার খাদ্য তালিকা থেকে মিষ্টি জাতীয়  ও শর্করা জাতীয় খাবার কমাতে হবে ।  বেশি খেলে ওজন বেড়ে যাবে এবং  উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে ।


মধুর ব্যবহারের ও উপকারিতার কথা বলে শেষ করা সম্ভব নয় । নিয়মিত মধু খাওয়া অভ্যাস করুন । নিয়মিত না খেতে পারলে সপ্তাহে তিনদিন মধু খান  ।সুস্থ থাকুন ।

আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে বা কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন ।দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো ।ভালো থাকুন ।

                                                    আল্লাহ হাফেজ 



 







 

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post