হলুদ কী? ব্যবহার, স্বাস্থ্য সুবিধা, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। Turmeric Uses, health benefits, side effects

হলুদ 

প্রাকৃতিক উদ্ভিদ থেকে পাওয়া পন্য মানব ইতিহাস জুড়ে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।প্রাণী জীবনের সাথে সহ বিকাশ লাভ করে যে প্রাকৃতিক পন্যগুলি উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায় তাদের অনেক গুলি বিলিয়ন বছর পুরাতন। হাজার হাজার এই পন্য গুলি রোগ এবং সংক্রমনের বিরুদ্ধে পাকৃতিক প্রতিরক হিসেবে কাজ করছে। 

হলুদ কী? ব্যবহার, স্বাস্থ্য সুবিধা, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া। Turmeric Uses, health benefits, side effects

গাছপালা থেকে প্রাপ্ত ঔষধ গুলি বহু সংস্কৃতির স্ব্যাস্থ্য সেবায় প্রাচীন এবং আধুনিক উভয় ক্ষত্রেই গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে আসছে।

প্রাকৃতিক উদ্ভিদ গুলির মধ্যে হলুদ(Turmeric) এমন একটি  উদ্ভিদ যার ঔষধি ব্যবহারের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে । এটি প্রায় ৪০০০ বছরের আগের ,দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় হলুদ শুধু প্রধান মসলা হিসেবেই নয় ,ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠানেও ব্যাবহৃত হয়। উজ্জ্বল বর্ণের জন্য একে “ভারতীয় জাফরান”(Indian Saffron”)ও বলা হয়।

মার্কো পোলো এই মসলার বর্ণনা দিয়েছিলেন ১২৮০ সালে।তিনি এমন একটি উদ্ভিদ কে দেখে অবাক হয়েছিলেন যা জাফরানের মত গুনাবলী সম্পন্ন ।

গ্রীস্মমন্ডল গুলোতে হলুদ ব্যাপক ভাবে চাষ হয় ,হলুদ দক্ষিন পূর্ব এশিয়া থেকে নিকটবর্তী ইন্দোচীন ,চীন ,জাপান এবং সেখান থেকে ক্রান্তীয় আফ্রিকা এবং পূর্ব আফ্রিকা পর্যন্ত পৌছেছিল। ক্যারিবিয়ান দ্বীপ এবং আমেরিকাতে সাম্প্রতিক কালে এটি পরিচিতি লাভ করেছে।

হলুদ একটি দক্ষিণ এশিয়ার মসলা যা হলুদ গাছের রাইজোম  পানি দিয়ে পরিষ্কার করে পনিতে সিদ্ধকরে তারপর শুকানো হয়। ভালোকরে শুকানোর পর একে গুড়া করা হয় । বর্তমানে হলুদ গুড়া করার জন্য মেশিনই বেশি ব্যাবহৃত হয় ।এটি বিভিন্ন খাবারে রঙ ,গন্ধ ,এবং স্বাদ যুক্ত করে থাকে।

বিভিন্ন সংস্কৃতিতে এটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। বাংলাদেশে এটি সাধারণত হলুদ বা হলদি নামে পরিচিত। এটি সংস্কৃত ভাষার শব্দ হরিদ্র থেকে এসেছে।

 কাচাঁ হলুদ

কাচাঁহলুদ সাধারণত আর্য়ূবেদিক পদ্ধতিতে ব্যাবহৃত হয় । ভারত ,বাংলাদেশ ,এবং পাকিস্তানের কিছু অংশে বিয়ের আগে বর ও কনের ত্বকে কাচাঁ হলুদ  পেষ্ট প্রয়োগ করা হয় ,বিশ্বাস করা হয়যে এটি ত্বককে উজ্বল করে তুলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া শরীর থেকে দূরে রাখে ।

হলুদ কি স্ব্যাস্বের জন্যা ভালো?

হলুদের স্বাস্থ্য উপকারিতা

১. সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে 

হলুদে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে কার্কুমিনের উপাদান, যা খাদ্যনালীকে বিভিন্ন ব্যাকটিরিয়া আক্রমণ থেকে রক্ষা করে খাবারে হলুদ গুঁড়া ব্যবহার খাদ্যনালীকে ক্ষতিকারক ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে এবং খাদ্যনালী প্রদাহের সম্ভাবনা হ্রাস করে।

২. দাঁতের যত্নে দরকারী

কাঁচা হলুদ দাঁতে এনামেল আস্তরণকে রক্ষা করে এবং দাঁতকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ কমাতে এবং মুখের ভিতরের ক্ষত নিরাময়ের নিয়ম হিসাবে কাঁচা হলুদ খাওয়া যেতে পারে।

৩. খাদ্য হজমে সহায়তা করে

খাদ্য হজমে হলুদের অনেক উপকারিতা রয়েছে। কাঁচা হলুদে কিছু গ্যাস্ট্রো-প্রতিরক্ষামূলক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা হজমে সহায়তা করে। ফলস্বরূপ, হজম শব্দ এবং গ্যাসের সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ খুব উপকারী।

 সাম্প্রতিক সময় আমাদের জীবনে এত চাপ।.হলুদের কারকুমিন আঘাতজনিত ব্যাধিগুলির সমস্ত মানষিক চাপ ,খারাপ, ভীতিজনক স্মৃতি হ্রাস করতে সহায়তা করে।

৪.হাড়ের জন্য উপকারী

প্রাচীন কাল থেকে কাঁচা হলুদ বিভিন্ন হাড়ের রোগের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ছাড়া ভাঙা হাড়ের জায়গায় কাঁচা হলুদের পেস্ট লাগানোও উপকারী। হলুদের প্রদাহ বিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যথা, প্রদাহ এবং হাড়ের টিস্যুগুলিকে সুরক্ষা দেয় এবং ভাঙা হাড়গুলি মেরামত করতে সহায়তা করে। মেনোপজের সময় কাঁচা হলুদ মহিলাদের হাড় ক্ষয় থেকে রক্ষা করে।

৫.  ত্বকের উজ্জ্বলতা

 আপনি জেনে খুশি হবেন যে, হলুদ ত্বকের উজ্জ্বলতা  এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। এটিতে ত্বকের উজ্জ্বলতার বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আপনাকে কালো দাগ থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।

৬. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

হলুদ এবং হলুদের কারকুমিন অ্যান্টি-ডায়াবেটিক এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও কাঁচা হলুদ হরমোন ইনসুলিনের ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং অগ্ন্যাশয়কে সুস্থ রাখে।

৭. বাতের ব্যাথায়

যারা বাতের সমস্যায় ভোগেন তাদের জন্যও হলুদ খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা যদি নিয়ম করে কাঁচা হলুদ খান তবে এটি ব্যথা হ্রাস করে এবং হাড়ের জয়েন্টগুলিকে চলাচলে সহায়তা করে।হলুদের তেল মালিশ করলে ব্যাথা কমে যায় ।

৮. ক্যান্সার প্রতিরোধ করে

কাঁচা হলুদে থাকা কারকুমিন ক্যান্সারকে ধ্বংস করতে সহায়তা করে। কার্কুমিন ক্যান্সারের কোষগুলির বৃদ্ধি বন্ধ করে এবং তাদের মেরে ফেলে এটি ক্যান্সারের সম্ভাবনা হ্রাস করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত কাঁচা হলুদ সেবন করায় প্রায় ছাপ্পান্ন প্রকারের ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

 নিয়ম হিসাবে কাঁচা হলুদ খেলে  স্ট্রোকের সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়াও কাঁচা হলুদের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য স্ট্রোক পরবর্তী চিকিত্সায় খুব উপকারী।

৯. দাঁতের যত্নে দরকারী

কাঁচা হলুদ দাঁতে এনামেল আস্তরণকে রক্ষা করে এবং দাঁতকে ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ কমাতে এবং মুখের ভিতরের ক্ষত নিরাময়ের নিয়ম হিসাবে কাঁচা হলুদ খাওয়া যেতে পারে।

১০.ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে 

 কাঁচা হলুদে অ্যান্টি-স্থূলত্বের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাই নিয়ম হিসাবে কাঁচা হলুদ খাওয়া শরীরে ফ্যাট জমে বাধা দেয় এবং বিপাকের হারও বাড়ায়।)

১১. সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দেয়

হলুদের কারকুমিন ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি এবং কাশি কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও কাঁচা হলুদ আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দেয়। কাঁচা হলুদে থাকা ভিটামিন সি সর্দি-কাশি কমাতেও সহায়তা করে।

হলুদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

হলুদ সরাসরি ত্বকে ব্যাবহার করলে ত্বকে হলুদ দাগ পরেযায়। সেজন্য আমাদের উচিত অন্যাকোন প্রাকৃতিক উপাদান যেটি ত্বকের সাথে মানানস্ই এমন উপাদান হলুদের সাথে মিশিয়ে ব্যাবহার করা।

মুখে বা শরীরে ব্যাবহারের পূর্বে আপনার বাহুতে বা কানের পিছনে লাগিয়ে প্যাচ টেষ্ট করতে ভুলবেন না কারণ সবার ত্বকের ধরণ এক রকম না।

যদি কারো অ্যলারজি থাকে তবে সরাসরি হলুদ ব্যাবহার না করাই ভালো। এতে ত্বকের লালচে ভাব ,চুলকানো বাড়তে পারে।

হলুদ লাগিয়ে সারা রাত রেখে দিবেন না। সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যাবহার করা ভালো।

সবাই ভালো থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন।

অল্লাহ হাফেজ।





 










Post a Comment (0)
Previous Post Next Post